(সান জু’র দ্য আর্ট অব ওয়ার বইটি নানাভাবে আমরা পড়ি। সেই বইটির আঁকাআঁকি ভার্সন তৈরির জন্য অনুবাদ করছি। তারই ধারাবাহিক প্রকাশ থাকছে এই লেখাটি। বইটি উন্মুক্তস্বত্ত্ব হিসেবে থাকবে।)
১. সান জু বলেন,
যুদ্ধের শৈল্পিকতা বা দ্য আর্ট অব ওয়ার* রাষ্ট্রের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ২. রণকৌশল জীবন-মৃত্যুর মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা কিনা নিরাপত্তা বা ধ্বংস ডেকে আনে। কোনভাবেই যুদ্ধের কৌশল এড়িয়ে যাওয়া চলবে না।
৩. রণকৌশল, সেই সময়ে, পাঁচটি ‘ধ্রুব বিষয়’ (事) দ্বারা পরিচালিত হয়। রণক্ষেত্রে সুযোগ তৈরির জন্য কৌশলগুলো সেই সব বিষয়ের ওপর নির্ভর করেই বিবেচনায় আনা উচিত।
৪. ধ্রুবকগুলো হচ্ছে:
(১) নৈতিক আইন;
(২) স্বর্গ;
(৩) পৃথিবী;
(৪) সেনাপতি;
(৫) যুদ্ধ-পদ্ধতি এবং শৃঙ্খলা।
৫.৬. সান জু প্রথম ধ্রুবক হিসেবে 道 শব্দাংশ ব্যবহার করেন। 道 অর্থ তাও, নীতির পথ বোঝানো হয়েছে। নৈতিক আইনের কারণে সাধারণ মানুষ ও তাদের নেতার মধ্যে পরিপূর্ণ সংযোগ স্থাপিত হয়। যে কারণে যেকোনো বিপদে সাধারণ মানুষ নেতাকে অনুসরণ করে।
৭. দ্বিতীয় ধ্রুবক হিসেবে 天। 天 অর্থ স্বর্গ, স্রষ্টা, পরিবেশ। ইংরেজি অনুবাদে স্বর্গ হিসেবে যা প্রকাশ করা হয়। এই ধ্রুবক দিন ও রাত, ঠাণ্ডা ও গরম এবং সময় ও কালের মাত্রা প্রকাশ করে।
৮. তৃতীয় ধ্রুবক হিসেবে 地। 地 অর্থ পৃথিবী, পরিবেশ ও ভৌগোলিক অবস্থান বোঝায়। চলতি অর্থে, পৃথিবী ধ্রুবকের মাধ্যমে দূরত্ব, বড়-ছোট আকার, বিপদ ও নিরাপত্তা, মুক্ত-পথ ও সুপথ, জীবন-মৃত্যুর সুযোগগুলো বোঝানো হয়।
৯. চতুর্থ ধ্রুবক হচ্ছে 將, যার অর্থ বোঝানো হয়েছে নেতৃত্ব বা নেতাকে। নেতা হবেন প্রজ্ঞাবান, একনিষ্ঠ, দয়ালু, সাহসী ও কঠোর গুণের অধিকারী।
১০. পঞ্চম ধ্রুবক হচ্ছে 法, যার অর্থ বোঝানো হয়েছে পদ্ধতি ও নিয়মকানুনকে। পঞ্চম ধ্রুবকটির মাধ্যমে, সৈন্যবাহিনীকে পরিচালনা করার কৌশল, সৈনিকদের মধ্যে কাজের প্রকরণ নির্ধারণ করা, সৈন্যদের কাছে রসদ পরিবহনের চলার পথের রক্ষণাবেক্ষণ ও সৈন্যদলের খরচ নিয়ন্ত্রণের বিষয়গুলোকে বোঝানো হয়েছে।
১১. যুদ্ধে যারা নেতৃত্ব দেবেন ‘জেনারেল’ বা 將-কে অবশ্যই পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। যে যত জানবে তার জেতার সুযোগ ততই বাড়বে। যে বিষয়গুলো জানবে তার ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই।
১২. সুতরাং, আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য, সামরিক অবস্থান ও পরিস্থিতি নির্ধারণের চেষ্টা করার সময়, যে সব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে:
১৩. (১) (যারা যুদ্ধ করছে) দুটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের মধ্যে কোনটি নৈতিক আইন নির্ভর? (২) দুই পক্ষের মধ্যে কার ক্ষমতা বেশি? (৩) পরিবেশ ও অবস্থান মিলিয়ে কোন পক্ষের সুবিধা আছে? (৪) কোন পক্ষ শৃঙ্খলাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে? (৫) কোন সেনাবাহিনী বেশি শক্তিশালী? (৬) কোন পক্ষের কর্মকর্তারা বেশি প্রশিক্ষিত? (৭) কোন সেনাবাহিনীতে পদোন্নতি ও শাস্তির গুরুত্ব কেমন?
১৪. এই সাতটি প্রশ্ন বিবেচনার মাধ্যমে যুদ্ধে কে বিজয়ী তার পূর্বাভাস দেয়া যায়।
১৫. যে জেনারেল পরামর্শ শুনে ও তার উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেয়, সে বিজয়ী হবে। এমনই একজনকে নেতৃত্ব প্রদান করা উচিত। যে জেনারেল পরামর্শ না শোনেন তিনি পরাজিত হবেন। এমন ব্যক্তিকে বরখাস্ত করতে হবে।
১৬. শুধু যুদ্ধের জন্য পরামর্শ নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও সাধারণ পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
১৭. পরিস্থিতি বুঝে নিজের পরিকল্পনা পরিবর্তন করার দক্ষতা থাকতে হবে।
১৮. সব যুদ্ধই কৌশলের ওপর নির্ভর করে। সানজু 詭 শব্দের মাধ্যমে যুদ্ধে প্রতারণা কৌশলের কথা বলেন।
১৯. সুতরাং, আক্রমণ করার সময়, সৈন্যদের যেন অক্ষম বলে মনে হয়; সৈন্যবাহিনীকে ব্যবহার করার সময়, তাদের অবশ্যই যেন নিষ্ক্রিয় বলে মনে হয়; যখন শত্রুর কাছাকাছি অবস্থান থাকবে, তখন শত্রুকে বিশ্বাস করাতে হবে যে সৈন্যবাহিনী অনেক দূরে অবস্থান করছে; যখন খুব দূরে সৈন্যবাহিনী অবস্থান করে, তখন শত্রুপক্ষকে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে সৈন্যরা কাছাকাছি আছে।
২০. শত্রুবাহিনীকে প্রলুব্ধ করতে হবে। দ্বিধায় ফেলে পরাজিত করতে হবে।
২১. যদি শত্রুপক্ষ সব ক্ষেত্রেই নিরাপদ থাকে তবে তার জন্য লড়াই করতে প্রস্তুত থাকতে হবে। শত্রুপক্ষ যদি শক্তিশালী হয় তবে তাকে যে করেই হোক এড়িয়ে চলতে হবে।
২২. যদি প্রতিপক্ষ রগচটা স্বভাবের হয় তবে তাকে বিরক্ত করার চেষ্টা করতে হবে। দুর্বল হওয়ার ভান করতে হবে যে প্রতিপক্ষ দুর্বলতা প্রকাশ করে দেয়।
২৩. যদি প্রতিপক্ষ স্বাচ্ছন্দ্যর অবস্থায় থাকে তাহলে তাকে অস্বস্তিতে ফেলতে হবে। যদি প্রতিপক্ষের বাহিনী একত্রিত থাকে তবে তাদের আলাদা করার পরিকল্পনা করতে হবে।
২৪. প্রতিপক্ষকে অপ্রস্তুত অবস্থায় আক্রমণ করতে হবে, অপ্রত্যাশিত জায়গায় আক্রমণ করুন।
২৫. এসব সামরিক কৌশল বিজয় নিশ্চিত করবে যে কারণে কৌশলগুলো আগেই প্রকাশ করা উচিত নয়।
২৬. যে সমরবিদ যুদ্ধের আগে তাঁর মস্তিষ্কে অনেক হিসেব করেন তার জেতার সম্ভাবনা বেশি, যেখানে যে সমরবিদ কম অংক কষেন তার পরাজয় সুনিশ্চিত। অনেক হিসেব-নিকেশ যুদ্ধে জয়ের পথ সুগম করে, কম করলেই বিপদ। যতটা না করলেই নয় ততটা অংক কষতে হবে। অংক দেখেই বোঝা যায় কে জিতবে আর কে হারবে?
-- Stay cool. Embrace weird.