প্রথমেই শিরোনামে “উচিত” শব্দটি কেন লিখেছি তা বলে নেয়া ভালো। এই উচিতটা আসলে সেই সব খুবই সাধারণ মানের শিক্ষার্থীদের যাদের সিজিপিএ নিয়ে তেমন ভাবনাই নেই। পাশ, আর সেমিস্টার বদলই যাদের জীবনের ধ্যান তারাই মোটামুটি সাধারণ মানের শিক্ষার্থীদের বলা যায়। এই শিক্ষার্থীদের অনেকের অনেক বড় বড় স্বপ্ন থাকে-বিসিএস ক্যাডার, প্রাইভেট ব্যাংকের এমটিও, কিংবা ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোবাকোর টেরিটোরি ম্যানেজার পোস্টসহ আরও অনেক আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন। স্বপ্ন বড় হলেও অভিকর্ষের টানে এই শিক্ষার্থীরা গড়পড়তা একটা জীবন কাটিয়ে দেয়। ভালো চাকরি হবে এই প্রত্যাশায় অনার্স জীবন শেষ হলেও ভালো চাকরি তেমন ধরাই দেয় না তাদের হাতে। আক্ষেপের একটা জীবন কাটিয়ে যায় সবাই। সেই সব শিক্ষার্থীর জন্য এই পোস্ট। আমি নিজে খুবই সাধারণ শিক্ষার্থী ছিলাম দেখে সেই সব সাধারণ শিক্ষার্থীর হতাশার মাত্রাটা বুঝি, নিজের অভিজ্ঞতা আছে অনেক!
অনার্সের তৃতীয় বর্ষে তেমন কিছু কাজ করলে পরের সময়টায় দারুণ কিছু করার সুযোগ তৈরি করা যায়। মনে রাখা ভালো, জীবনে নিজের সুযোগ নিজেরই তৈরি করতে হয়; অন্যের করুণার সুযোগের প্রতীক্ষায় কেন বসে থাকবেন। অনেকেই এই কথার বিরোধিতা করবেন, তাদের বলি-শচীন টেন্ডুলকার অনেক ম্যাচে খারাপ করলেও পরের ম্যাচগুলো খেলতেন সৌভাগ্য কিংবা পরিশ্রমের জোরেই। আপনি আমি শচীন না, আমাদের পরিশ্রম আছে, কিন্তু সৌভাগ্য সব সময় ধরা দেবে না। আর ধরা কেনই বা দেবে? সব মিলিয়ে দেশে প্রতিবছর ২ হাজারের বেশি ভালো চাকরির সুযোগ আসে (বিসিএস+ব্যাংক নিয়ে দু হাজার ভালো সুযোগ আসলেই কম)! সবার যদি সমান সৌভাগ্য আসতো, তাহলে চাকরি আর কারো করা লাগতো না।
তো তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় কি করতে পারেন? আমি কিছু বুলেট পয়েন্ট লিখতে চাই, এগুলোকে পরামর্শ না ধরাই ভালো। নিজের চারপাশের মানুষদের কাছ থেকে এসব শিখে দেখে লিখছি।
* নিয়মিত পত্রিকার অভ্যাস করুন। অনার্স শেষে বিসিএস পরীক্ষার জন্য হুট করেই পত্রিকা পড়ার অভ্যাস আমাদের অনেকের। ওই সময়ের জন্য পত্রিকা পড়ার অভ্যাস না রেখে এখনই শুরু করুন। সাকসেস আসলে লাইফস্টাইল, পত্রিকা পড়ার অভ্যাস আপনার প্রতিদিনকার অভ্যাস হিসেবে গড়ে তুলুন। দেখবেন কয়েকমাস পরে আপনার মস্তিষ্ক স্বয়ংক্রিয় একটা স্পঞ্জের মত হয়ে যাবে, সহজেই যে কোন ইনফরমেশন মনে রাখতে পারবেন। আমাদের ব্রেইনও কিন্তু আমাদের মত, কথা শুনতে চায় না। বাড়ির পাশে রাতে জোরে গান বাজালে যেমন শুনুন না শুনুন কানে আসবেই, তেমনি নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করুন। ব্রেইন স্বয়ংক্রিয় নিজেই ইনফরমেশন নেয়া শুরু করবে।
* সপ্তাহের ২ দিন অন্তত নিজের মত সময় কাটানোর চেষ্টা করুন। আমাদের বর্তমান যে রুটিন, ক্লাস+বাসা+ঘুম+ফেসবুক=জীবন! এটা অন্তত দুদিনের জন্য বাদ দিন। চেষ্টা করুন প্রতি সপ্তাহে দুদিন বই পড়া, সিনেমা দেখা, ঘুরতে যাওয়ার মত অভ্যাস চালু করুন। ঢাবি ক্যাম্পাস থেকে একা একা হেটে হেটে ফার্মগেট চলে যান, খামারবাড়ী হয়ে সংসদ ভবন একা ঘুরে আসুন। একঘেয়ে জীবন ব্রেইন+শরীর অটোমেটেড মুডে চলে যায়, শরীরকে দৌড়ের উপর রাখুন।
* নেটওয়ার্ক পাওয়ার তৈরি শুরু করুন। আপনি যে বিষয়ে পড়ছেন কিংবা যে দিকে চাকরি করতে চান সেই দিকে নেটওয়ার্ক শুরু করুন। সিনিয়র ২/৩ ব্যাচের চেয়ে আরও সিনিয়র যারা চাকরি করছেন তাদের ফেসবুক বা লিংকডইনে খুঁজে রাখুন। জুনিয়রদের ফেসবুক কিংবা বাস্তব দুনিয়াতে চিনে রাখুন, নেটওয়ার্ক পাওয়ার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করুন। শখের কোন বিষয় থাকলে সেদিকেও নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারেন।
* সিভি তৈরি শুরু করুন। তৃতীয় বর্ষ থেকেই নিজের ইউনিক সিভি তৈরির চেষ্টা শুরু করুন। অন্যের সিভি দেখে শিখুন, কপি করবেন না। করলে আমার মত ধরা খাবেন। একবার এক সিভির টেমপ্লেট দিয়ে আমরা ৪ বন্ধু গ্রামীণফোনে ইন্টার্নশিপের জন্য আবেদন করে ছিলাম, চারজনই ভাইবাতে বাদ পড়েছিলাম।
* যোগাযোগের জাহাজ হউন। তৃতীয় বর্ষ থেকে নিজেকে ক্যারিয়ারের জন্য রেডি করুন। বিবিএ পড়ছেন না তো কি হয়েছে, ইউটিউব থেকে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা আনুন। ইংরেজি জানা আর বলা এখন ফুটানি না কিন্তু। আপনাকে নিজেকেই নিজে তৈরি করতে হবে, কেউ শিখিয়ে দেবে এটা ভাববেন না। ভাবলে বিপদে পড়বেন।
* মোটিভেশন থেকে দূরে থাকুন। নিজেকে নিজেই মোটিভেশন দিন কিংবা সর্বোচ্চ টেডেক্সের ভিডিওগুলো দেখুন। মোটিভেইট+লিসেনিং পাওয়ার বাড়বে।
* ফেসবুকে আসক্তি কমানো ভালো কিন্তু। কোরা কিংবা লিংকডইনে সময় দিতে পারেন। লাইফ হ্যাকিং রিলেটেড বিষয়গুলো শেখা শুরু করুন।
* নিজে যে বিষয়ে পড়ছেন সেই দুনিয়াতে ক্যারিয়ার করা অনেক প্রেশার, চেষ্টা করুন অন্য দুনিয়াতে কাজ করতে। হোটেলেও কিন্তু মেডিকেল পাশ ডাক্তাররা চাকরি করে, পত্রিকায় প্রকৌশলীদেরও চাকরি করতে দেখবেন।
* সবশেষে জ্ঞান দেয়া-উচিত টাইপের লেখা-টেখা পড়া বাদ দিন।