অরুন্ধতী রায়ের বই প্রায়শই সমালোচিত হয়। আজাদী নামের বইটি নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। উর্দুতে আজাদি মানে স্বাধীনতা। বইটির উপ-শিরোনাম “স্বাধীনতা: ফ্যাসিবাদ: কল্পকাহিনী”। অরুন্ধতী ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন বুকার পুরস্কার বিজয়ী ঔপন্যাসিক হিসাবে সর্বাধিক পরিচিত। অথচ, নিজের জন্মভূমি ভারতে তিনি একজন রাজনৈতিক কর্মী ও বিতর্কবাদী হিসাবে আলোচিত। মুক্ত বাজার নির্ভর পুঁজিবাদ, প্রাকৃতিক সম্পদের শোষণ ও পরিবেশের দূষণ, সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন, নারীদের উপর পুরুষ সহিংসতাসহ দক্ষিণ এশিয়ার আলোচিত মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তার কলম চলে। এই বিষয়ে তার কথা ও সুর আমরা সকলেই অনেক বছর ধরে শুনে আসছি। তার শব্দ ও লেখা আবেগপ্রবণ হলেও এসব প্রশ্ন আসলে নতুন কিছু নয়।
ভারতের শাসক দল, বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনার উগ্রতা বইটিকে যেন আরও বিতর্কিত করছে। তার চোখে বিজেপি দলটি আসলে আরএসএসের (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ) রাজনৈতিক শাখা। ১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত উচ্চ বর্ণের হিন্দু আন্দোলনের ফল। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর ভারতকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। ইতিহাস থেকে জানতে পারছি, কিভাবে বিজেপি কংগ্রেস পার্টির আদর্শ ও জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে সব আদর্শকে কিভাবে চাপিয়ে রাখা হয়েছে। অরুন্ধতী আরএসএস ও বর্তমান সরকার, প্রধানমন্ত্রীকে ফ্যাসিবাদী আখ্যা দিতে দ্বিধা করেন না। ভারতকে নিয়ে আসলে কি আরএসএস একটি হিন্দু জাতির দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে যায়? রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভারত যেন কখন কোটি মুসলমানদের জন্য পাকিস্তান না হয় কবরস্থান ধাঁধায় ফেলে দিচ্ছে। অরুন্ধতী বিজেপির নাগরিক সংশোধনী আইন ও নাগরিকদের জাতীয় নিবন্ধনকে হিটলারের নুরেমবার্গ আইনের সাথে তুলনা করেছেন। সেই আইন নির্ধারণ করেছিল কে জার্মান ছিল আর কে হতে পারে না। ভারত কি সেই ১৯৩০ দশকের জার্মানীতে পরিণত হচ্ছে?
জাতিগত ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে বৈষম্য আর বর্ণপ্রথার কঠোর সমর্থনের জন্য বিজেপি আজ যেন ভারতকে বর্ণবাদী দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করছে। বিতর্কিত কাশ্মীর প্রদেশে সামরিক আইনের নির্মম আরোপ নিয়ে প্রশ্ন করেছেন তিনি। ভারতের স্বাধীনতার পর থেকেই এমনটা চলছে। বিষয়টি অনেকটা কুর্দিদের প্রতি সাদ্দাম হোসেনের আচরণের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। অরুন্ধতী রায় মনে করছেন, যখন অনেক দেশ শরণার্থী সংকট মোকাবেলা করছে, ভারত সরকার তখন নিজে থেকেই তার নাগরিকদের উদ্বাস্তুতে পরিণত করছে। বিজেটি ভারতকে একটি উপমহাদেশের পরিচয় থেকে সরিয়ে নিজেকে একটি দেশে সঙ্কুচিত করার চেষ্টা করছে৷ দেশ হিসেবে নয়, অরুন্ধতী এখনকার ভারতকে একটি প্রদেশের সঙ্গে তুলনা করছেন। একটি আদিম জাতি-ধর্ম নির্ভর প্রদেশ।
অরুন্ধতীর বইটি অনেক প্রশ্নের উপর ভিত্তির করে লেখা হয়, যেখানে লেখক নিজেকে প্রশ্ন করেন আর উত্তর খুঁজছেন ইতিহাস থেকে। সাম্প্রতি ইতিহাস থেকে ভারতের সাম্প্রদায়িক দিকটি তিনি বের করার চেষ্টা করছেন। অসম্প্রদায়িক ভারত কি কখনও অসম্প্রদায়িক ছিল? ইতিহাস এখনেই যেন চুপসে যায়।
রকমারি থেকে আজাদী বই সংগ্রহ করা যাবে।
-- Stay cool. Embrace weird.