বেশির ভাগ মানুষই নাকি ইমেইল তিন লাইনের বেশি হলে পড়েন না। সারা দিন কাজে-অকাজে এতই ইমেইল পাই যে আমরা অনেক সময় আসল ইমেইলই দেখার সুযোগ পাই না। যা ইমেইল পাই আমরা, কিংবা যা পাঠাই তাতে কি গ্রামার মেনে চলি আমরা? হাজার শব্দের ইমেইল পাঠাবেন না আট-নয় শব্দে ইমেইল পাঠাবেন? হার্ভার্ড বিজনেজ রিভিউতে How to Write Email with Military Precision লেখাটা বাংলায় শেয়ার করছি এই পোস্টের মাধ্যমে, যদি না আমাদের কাজের ইমেইল আসলে কাজে দেয়।
মিলিটারির ভাষায় বলতে চাই, দুর্বল ফরম্যাটে লেখা ইমেইলই ঠিক করে দেয় আসলে আপনার মিশন অ্যাকমপ্লিসড না মিশন ফেইলিওর। পেশাজীবনে গোছানো-সাজানো লেখা ইমেইলই বলে দেয় আসলে আপনি কর্মজীবনে কতটা সফল। আগে শিক্ষিত মানুষ কতটা জ্ঞানী তা তাঁর লেখা চিঠি থেকেই বোঝা যেত। আমি নেপোলিয়ান বোনাপার্ট আর সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা অনেক চিঠি পড়েছি, সেই রকম-জোস, দারুন। ওয়ারেন বাফেট তার কর্মীদের প্রতিবছরই নাকি চিঠি লেখেন, সেই চিঠির ভাষাও দারুণ।
মিলিটারি স্টাইলে সাজানো-গোছানো ইমেইল লেখার জন্য তিনটা উপায় অনুসরণ করতে পারেন কিন্তু!
১. সাবজেক্টে কিওয়ার্ডস ব্যবহার করুন
আমরা এতটাই ব্যস্ত যে ইমেইল পাঠানোর সময় সাবজেক্ট বক্সে Email/Hi/Hello From X/Important Email/Application for Job/Notice এসব লিখে পাঠিয়ে দেই। যারা সচেতন পাঠক তারা কিন্তু এধরণের ইমেইলে বিরক্ত হন। যারা জিমেইল বা ইয়াহুর ইমেইল ছাড়া ব্যক্তিগত ওয়েব ডোমেইনের পার্সোনাল ইমেইল ব্যবহার করেন তারা কিন্তু প্রথমেই সাবজেক্টে চোখ দেন। এসব শব্দ কখনই ইমেইলের বিষয়ে না লেখাই ভালো। মিলিটারিতে বিভিন্ন বার্তায় Verb ও Noun বেশি ব্যবহার করা হয়, যেন বার্তা ছোট হয়-সময় কম লাগে পড়তে। ইমেইলের মাধ্যমে কোন কাজের অনুরোধ করলে বিষয়ভিত্তিক কিওয়ার্ডস ব্যবহার করুন।
এমন কিছু কিওয়ার্ডস হলো:
ACTION – Compulsory for the recipient to take some action
SIGN – Requires the signature of the recipient
INFO – For informational purposes only, and there is no response or action required
DECISION – Requires a decision by the recipient
REQUEST – Seeks permission or approval by the recipient
COORD – Coordination by or with the recipient is needed
কিওয়ার্ডগুলো সাবজেক্টে থাকলে যাকে মেইল পাঠাচ্ছেন সে বুঝতে পারে আসলে কি করতে হবে। এরপর থেকে ইমেইল লেখার সময় সরাসরি অর্থ প্রকাশ করে এমন শব্দগুলোই ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
একটা কথা মনে রাখার চেষ্টা করুন, আপনি কি বলছেন ইমেইলে তার চেয়ে যিনি ইমেইল পড়ছেন তার দিকটা ভাবুন। আমরা ইমেইল লেখার এসময় কাকে পাঠাচ্ছি তার কথা তো ভাবিই না, উল্টো প্রাপকের সময়ের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছি।
২. নিচের কথাই উপরে লিখুন!
ইমেইল লেখার সংবিধানগুলোতে এই কথাটিকে Bottom Line Up Front বা BLUF শব্দসংক্ষেপ দিয়ে প্রকাশ করে। নিউজ করার সময় যেমন ফাইভ ডাব্লিউকে গুরুত্ব দিয়ে সব লেখা হয়, তেমনি ইমেইল লেখার সময় five W’s: who, what, where, when, and why দিয়েই ইমেইল লিখুন। এভাবে আপনি যে তথ্য রিডারকে দিতে চাচ্ছেন তা কিন্তু পরিষ্কারভাবে দিতে পারছেন।
এয়ার ফোর্সে এভাবে ইমেইল পাঠানো হয়:
BLUF: Effective 29 Oct 13, all Air Force Doctrine Documents (AFDDs) have been rescinded and replaced by core doctrine volumes and doctrine annexes.
(কে, কি, কখন, কোথায়, কিভাবে, কার-সবই কিন্তু এক লাইনে লেখা শেষ। ইমেইলে এত বড় লাইন লিখবেন না, কিন্তু ছোট ছোট বাক্যে লেখা শেষ করুন। স্টিভ জবসের একটা ট্রিক্স ছিল, টুইটার লাইক হেড লাইন। ১৪০ শব্দে কিছু না বোঝাইতে পারলে আসলে কয়টা মহাকাব্য লাগবে সেটা নিয়ে ভাবতে পারেন!)
ইমেইলকে এমনভাবে লিখুন যেন পাঠকের কাছে “how does this email affect me?” প্রশ্নের উত্তর পৌছে যায়, যদি না পারেন তাহলে বিপদ কিন্তু!
৩. সাশ্রয়ী হউন না!
মিলিটারিতে যারা কাজ করেন তারা জানেন ছোট বার্তা বেশি কাজের। যে কাজে কম কথা লাগে তা কেন বড় বাক্যে জানাচ্ছেন আপনি? আপনার ইমেইল যদি স্ক্রল করে নিচে নেমে পড়তে হয় তাহলে আপনি কোটি টাকা মূল্যের তথ্য পাঠালেও তা পাঠককে টানার সম্ভবনা অর্ধেকে নেমে আসবে। আপনি ভাবুন তো, আপনাকে যদি কেউ এমন ইমেইল দেয় তাহলে কি আপনি সেই ইমেইলখানা খুলিয়া দেখিবেন? যদি উত্তর হয়, ‘না’, তাহলে অন্যদের কেন সময় নষ্ট করবেন? আর যদি বড় ইমেইল পাঠানো আপনার নেশা হয়, তাহলে অন্য বুঝিয়া নিবে আপনি কতটা পেশাদার।
লেখায় অ্যাকটিভ ভয়েস ব্যবহার করু। যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার ফোর্সের ম্যানুয়েলে নাকি লেখা আছে, “Besides lengthening and twisting sentences, passive verbs often muddy them.” প্যাসসিভ বাক্য পরীক্ষার লেখায় দারুণ কাজে দেয়, পৃষ্টা ভরাতে বিকল্প নেই প্যাসসিভ ভার্বের-ইমেইলে এ ধরণের স্টাইল না আনাই ভালো। টিভিতে সংবাদে কখনও শুনেছেন “ফ্যাক্টরিটিতে বোম ফেলা হয়েছে একটি এফএইটিন বিমান দিয়ে”, সব সময় শুনবেন ‘একটি এফএইটিন বিমান ফ্যাক্টরিতে বোম ফেলেছে।’! অ্যাকটিভ ভার্ব কিন্তু আপনার কাজটিকেই প্রকাশ করে।
ছোট মরিচে ঝাল বেশি, তেমনি ছোট ইমেইল আসলে বেশি কাজের। বেশি বড় ইমেইল পাঠাতে হলে, সেটা ইমেইলের প্রথম দু/তিন লাইনের মধ্যেই স্বীকার করে নিন।
একটা টেমপ্লেট ইমেইল দেখুন,
Subject: INFO – Meeting Change
(বিষয় কিন্তু স্পষ্ট, কি করতে চান তা স্পষ্ট করে লিখুন)
Shannon,
(স্যার/ম্যাডাম লিখে শুধু বাংলাদেশিদেরই ইমেইল করতে পারেন। ডিয়ার শব্দ ব্যবহার করবেন না কখনই!)
Bottom Line: We scheduled the weekly update meeting for Thursday at 2 PM CST to accommodate the CFO’s schedule.
(আসল কথা কিন্তু স্পষ্ট। আপনি দুঃখিত, আপনি সুখি-খুশি এসব লিখে ইমেইল বড় করবেন না। স্কুলে শেখা With Due Respect….এসব টেমপ্লেট ইমেইলে কখনই লিখবেন না।)
হার্ভার্ড বিজনেজ রিভিউতে বলা হয়েছে, ইমেইল লেখার সময় মিলিটারি এটিকেট ব্যবহার করলে আপনি যাই বলতে চান, তাই নাকি নির্ভুলভাবে কোন প্রকারের নয়েজ ছাড়াই অডিয়েন্স জানাতে পারবেন।
ট্রাই করে দেখুন তো?
—
ডিসক্লেইমার: আপনি ভাবতে পারেন আমরা তো বাংলাদেশি, বিদেশের এসব ইমেইল লেখার এটিকেট শিখে লাভ কি? শিখে লাভ-লস বলে কোন শব্দ নাই। এখনও আপনি যাদের ইমেইল করেন তারা হয়তো গত শতাব্দীতে এসএসসি/এইচএসসি পাশ করে ছিলেন, যে কারণে ইমেইল হয়তো তাদের পেশাজীবনে একটু কমই গুরুত্ব পায় বাংলাদেশে। এখন কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় মিলেনিয়ালসরাই কাজে ঢুকছেন। বিভিন্ন পেশাতে মিলেনিয়ালসরাই ধীরে ধীরে নেতৃত্ব দেয়া শুরু করছে, তারা কিন্তু আপনার বড় ইমেইল পড়ার জন্য বসে নেই। আপনি-আমি আমাদের ইমেইল যোগাযোগকে স্মার্ট আর স্মুথ না করলে তারা কিন্তু আমাদের ইমেইল পড়বেই না। এজন্য সময় থাকতে শেখা ভালো না?
আরও পড়ুন: