কয়েক মাস আগেও বই পড়ার তেমন অভ্যাসই ছিল না আমার। গেল বছরের ডিসেম্বরে হুট করে কি না বই পড়ার অভ্যাস করে ফেলি আমি। নন-ফিকশন কয়েকটি বই কয়েক সপ্তাহে শেষ করে ফেলি। দ্রুত বই পড়া, কিংবা সারাক্ষণ বই নিয়ে পড়ে থাকাই কিন্তু বই পড়ার অভ্যাসকে প্রভাবিত করে না। প্রথম দিকে আমি যখন বই পড়তাম, তখন কয়েক পাতা পড়ার পরেই ফেসবুক ডাকতো আমাকে! এরপরে হুট করেই দেখলাম আমি একটানে ২০ পাতা পড়ে ফেলছি! কোন লাইন কিংবা অধ্যায় বাদ না দিয়েই এক বসাতেই বিশ পাতা শেষ করা কিন্তু একটু কঠিনই। সেক্ষেত্রে আমি যে বুদ্ধিতে পড়ি, প্রতিদিন যতবার ট্রাফিক জ্যামে পড়ি ততবারই ব্যাগ থেকে বই টান দেই। ৩০ মিনিটে ২০ পাতা পড়া কিন্তু জ্যামে বসে কোন ব্যাপারই না। ট্রাফিক জ্যামকে এখন তো আমার আশীর্বাদই মনে হয়!
আমি বই পড়া শেষে, সেই বইয়ের মূল থিম সব সময় মাথায় রাখার চেষ্টা করি। বই দাগিয়ে পড়ার অভ্যাস না থাকলেও মাথায় নোট নেয়ার অভ্যাসটা তৈরি করে ফেলেছি এখন। আর যে কোন বই শেষ করে তার সামারি পয়েন্টস, অন্যদের রিভিউ পড়ে বইটার একে বারে টেনে মাথায় নিয়ে ফেলি।
যে বইয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন তা জোর করে পড়ার অর্থই
বই রিভিউ দেখে বই পড়ার জন্য নির্বাচন করি আমি কিন্তু যে বইয়ের প্রথম ২০ পেইজ পড়ার পরে আমার ভালো লাগে না তা আমি আর শেষ করি না। যেমন এরিক রিসের অনেক জনপ্রিয় একটা বই লিন স্টার্টআপ আমি ধরেও শেষ করতে পারি নাই। অথচ এই বইটা স্টার্টআপ হিট লিস্টে প্রথম ১০টি বইয়ের একটি। যে বইয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন তা জোর করে পড়ার অর্থই নেই কিন্তু।
বই পড়ার সময় কোথায়?
এপ্রশ্নের উত্তরের চেয়ে ভাবুন তো দিনে তিন বেলা খাওয়ার সময় কি পাই আমরা? যদি আপনি তিনবেলা খাবার সময় পান, তাহলে অবশ্যই বই পড়ার সময় পাবেনই। বই পড়ার জন্য সময় বের করে পড়তে চাইলে কোনও দিনই আসলে বই পড়া হবে না আপনার। ধরুন প্রতিদিন সকালে দাঁতব্রাশ করি আমরা নিয়মিত। এটা অভ্যাস, কিংবা রিচুয়াল করে ফেলেছি আমরা। আমার মতে, বই পড়াটা আসলেই তাই-অভ্যাস।
যেভাবে শ্বাস নেই, সেইভাবে বইপড়াকে আয়ত্বে আনা জরুরী। বই পড়েই যে পান্ডিত্য অর্জন হবে তা নয়, কিন্তু দারুণ একটা স্মার্ট লাইফ স্টাইল কে না চায়? সেক্ষেত্রে স্মার্টফোনে মাথা গুঁজে রাখার চেয়ে সত্তর-আশির দশকের স্টাইলে বই পড়া বিষয়টা কিন্তু দারুণ।
বিনে পয়সায় বই পড়বেন না!
বই কিনে পড়ার অভ্যাসটা একটু বেশিই দারুণ। আমি ফ্রি কিংবা পাইরেটেড বই কমই পড়ি, সত্যি! ১ কিংবা ২ ডলার রেঞ্জে কিন্ডলে বই কিনে পড়ি-দাম দিয়ে কিনলে তার জন্য কিন্তু মায়া টানে! বই কেনা বিলাসিতা হতে পারে, কিন্তু বই পড়া না।
“যখন আমি কিছু টাকা পাই তখনই বই কিনি, আর যখন সেখান থেকে কিছু টাকা বেঁচে যায় তখন আমি খাদ্য ও পোষাক কিনি।”
-ইরাসমাস, ষোড়শ শতকের দার্শনিক
বই পড়া, কিন্তু ঘোরাঘুরি করা।
ধরুন, টাকা থাকলে আমরা ঘুরতে যাই। বই পড়াও কিন্তু ঘোরাঘুরি করাই!
যারা ঘোরাঘুরি বেশি করে তারা কিন্তু চুপচাপ থাকে, মাথা ব্যস্ত রাখে সারাক্ষণ। আমি যদিও বেশিই কথা বলি, কিন্তু চেষ্টা করি দিনে ৫০ পৃষ্টা শেষ করতে। ওয়ারেন বাফেট নাকি দিনে ৫ ঘণ্টাই বই পড়ে, আমি তো ওয়ারেন হতে পারব না, কিন্তু সে যে বই পড়ে তা কিন্তু পড়তে পারবো।
আপনি যদি জীবনকে একটি খেলা ভাবেন, সেই খেলার একেকটি লেভেল অতিক্রম করার জন্য একেকটি বই পড়ুন। যে যত বই পড়বেন সে তত লেভেল উপরে চলে যাবেন।
আপনি যদি জীবনকে একটি খেলা ভাবেন, সেই খেলার একেকটি লেভেল অতিক্রম করার জন্য একেকটি বই পড়ুন। যে যত বই পড়বেন সে তত লেভেল উপরে চলে যাবেন। জ্ঞানী হওয়াই বই পড়ার কিন্তু লক্ষ্য না, বই পড়ে তা ভেবে কাজ করাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ!
1 thought on “একটু বেশিই যেভাবে বেশি বই পড়বেন”