এমনিতেই কিন্তু বই পড়ার অভ্যাস তেমন নেই আমাদের। সেখানে এক বছরে ২০০ বই পড়া পাগলামি মনে হতে পারে। আবার ২০০ বইয়ে কতগুলো পৃষ্ঠা থাকবে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলতেই পারেন। মোটামুটি গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ পৃষ্ঠার ২০০ বই পড়ার দারুণ এক ফর্মূলা প্রকাশ করেছে ইন্ক ডট কম, যদিও বেটার হিউম্যানসে প্রথম লেখাটি প্রকাশিত হয়। ইতিবাচক লাইফস্টাইল, পার্সোনাল মটিভেশন, স্টার্টআপ-অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ, গোল সেটিং, লিডারশিপ, মার্কেটিং-সেলসের উপর বইপত্র দারুণ এই উপায়ে পড়া যায়।
২০১৬ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আমি ৩৯টা বই পড়া শেষ করেছিলাম। বেশির ভাগ বই উদ্যোগসম্পৃক্ত আর গোল সেটিং রিলেটেড। চেষ্টা ছিল বিভিন্ন লিস্টে টপ টেন বইগুলোকে পড়তে। সব বই যে পড়ে দারুণ লেগেছে তা বলবো না, কিছু বই ছিল দারুণ (স্টিভ জবসের বায়ো ছিল ২০১৬ সালে আমার পড়া সেই মাত্রার দারুণ বই)-আর কিছু বই আমি বুঝিই নাই-মাথার উপরে ছিল (যেমন এরিক রিসের লিন স্টার্টআপ)।
সপ্তাহে নিজের স্কিল বাড়ানোর জন্য যে কোন বই ত্রিশ মিনিট পড়াকে দারুণভাবে উৎসাহ দেন অনেক লাইফ কোচ। ওয়ারেন বাফেট এখন নাকি দিনের ৮০ ভাগ সমই কোন না কোন বই পড়েন। বছর শেষে নিজের কর্মীদের বই পড়ার পরামর্শ লিখে নিয়মিত চিঠি লেখেন এই ধনকুবের। শুধু বাফেট নয়, বিল গেটস তো রীতিমতো গেটস নোটস লিখেন বিভিন্ন বই পড়ে। বছরে ৫০টার মত বই পড়েন হাইস্কুল ড্রপআউট বিল। অন্যদিকে জ্যাকারবার্গ দু’সপ্তাহে নাকি একটা বই শেষ করেন। এলন মাস্ক, জ্যাক ডর্সি সবাই কিন্তু সেই লেভেলে বই পড়েন।
যে ভাবে ২০০ বই শেষ হবে
এমনি মানুষ গড়ে ২০০ থেকে ৪০০ শব্দ পড়তে পারেন, যেখানে বিভিন্ন বইয়ে গড়-পড়তা ভাবে ৫০ হাজারের কম-বেশি শব্দ থাকে।
এই হিসেবে,
২০০ বই * ৫০০০০ শব্দ/বই = ১০ মিলিয়ন শব্দ (১ কোটি শব্দ)
১০ মিলিয়ন শব্দ/৪০০ শব্দ পার মিনিট = ২৫,০০০ মিনিট
২৫,০০০ মিনিট/৬০ = ৪১৭ ঘণ্টা
হিসেব পরিষ্কার, বছরে ২০০ বই পড়তে আপনার-আমার মতো গড় মানুষের বছরে ৪১৭ ঘণ্টা সময় লাগবে, মাত্র।
৪০০ তো ব্রায়ান লারার টেস্ট ক্রিকেটে রান ছিল, সেখানে সারা বছরে এত ঘণ্টা কিভাবে পড়া সম্ভব!
একটু অন্য পরিসংখ্যান দেখা যাক,
আমরা নাকি বছরে ৬০৮ ঘণ্টা গড়ে সোশাল মিডিয়াতে সময় কাটাই। (প্রতিদিন গড়ে ২ ঘণ্টা তো কমনই!)
১৬৪২ ঘণ্টা দেখি টেলিভিশন, সুলতান সুলেমান+শার্লক+ডেক্সটার।
৩৬০ ঘণ্টা বছরে গড়ে ট্রাফিক জ্যামে সময় কাটাই আমরা।
এই ঘণ্টার হিসেব কিন্তু বলছে বছরে ইচ্ছে করলে ১০০০ বই পড়া সম্ভব!
আসলে সারা দিন মিলিয়ে ৭০ মিনিট পড়ার সময় দিলেই বছরে ২০০ বই পড়া সম্ভব। এ হিসেবে মাসে ২০০০+ মিনিট; বছরে ৪২০+ ঘণ্টা।
পেশাজীবিদের জন্য অবশ্য দিনে ৭০ মিনিট পড়ার জন্য ব্যয় করা বেশিই ব্যয়বহুল।
গুগলিং করে পেশাজীবিদের জন্য যা পেলাম,
সকালে নাশতার আগে পড়ে ১০ মিনিট, ট্রাফিক জ্যাম বা অফিসে যেতে যেতে ২০ মিনিট, সকাল ১১-১২টার নাশতার সময় ১০ মিনিট, দুপুরের লাঞ্চ ব্রেকে ১০ মিনিট, অফিস থেকে ফেরার পথে ২০ মিনিট, রাতের খাবারের পরে ২০ মিনিট=মোট ৭০+ মিনিট!
সারা সপ্তাহে পড়ার তেমন সময় না পেলেও শুক্রবার ও শনিবার ছুটির দিনটিকে বই পড়ার জন্য ব্যয় করতে পারেন।
তো কি কি শিখতে পারেন,
যে যেই পেশার মানুষ সেই পেশার আলোচিত ৩ মানুষের জীবনী দিয়ে শুরু করুন।
গুড রিডসসহ বিভিন্ন বুক রিভিউ সাইটে পছন্দের লিস্ট খুঁজে নিতে পারেন।
অফিসের বস যে বই পড়ছেন তাও পড়তে পারেন।
তো, হ্যাপি রিডিং।
—
আমার পছন্দের যে বইগুলো পড়তে পারেন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যে বইগুলো পড়া উচিত
-- Stay cool. Embrace weird.
2 thoughts on “এক বছরেই ২০০ বই পড়বেন যেভাবে!”