কেস ১: আহমেদ মুসা ঢাকার মিরপুরের ব্যবসায়ী ছিলেন। হুট করে ২০১৮ সালে মারা যান। মারা যাওয়ার পরে আরেক ব্যবসায়ী তার কাছে ১০ লাখ টাকা পায় বলে দাবি করেন। এখন তার পরিবার সেই অর্থ মাসে মাসে কষ্ট করে ফেরত দিচ্ছে। কোন কাগজপত্র কিচ্ছু নেই, কিন্তু টাকা শোধ করে যাচ্ছেন।
কেস ২: আবির আহমেদ তার মামাতো ভাই ইসরাফিলকে ৩০ হাজার টাকা ধার দেয় ৭ দিনের জন্য। এখন ২ বছর হতে চললো মামাতো ভাই টাকা ফেরত দিচ্ছে, ফোনে যোগাযোগ নেই।
কেস ৩: জুয়েল মাহমুদ সহকর্মী ইশতিয়াকদের ২০ হাজার টাকা ধার দিয়েছেন। ৪ মাস হতে চললো টাকা ফেরত দেয়ার কোন নাম নেই লোকলজ্জার ভয়ে জুয়েল কাউকে কিছু বলতে পারছে না।
কেস ৪: শওকত তার মায়ের কাছ থেকে ২২ লাখ টাকা ব্যবসার জন্য ধার নেয়। এখন মা আর ছেলে সম্পর্ক খারাপ।
নানা প্রয়োজনে আমরা টাকা ধার দেই। টাকা ধার দেয়া-নেয়ার কারণে অনেক সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্ক নষ্ট হয়। টাকা ধার দেয়া নানান ঘটনা থেকে এই লেখাটি লিখছি।
যখন আত্মীয় কাউকে টাকা ধার দেবেন:
-যিনি টাকা ধার চাচ্ছে তার সম্পর্কে পরিবারের অন্য কেউ ভালো জানেন তার কাছে খোঁজ খবর নিন। যিনি ঋণ নিচ্ছেন তার আগের আচরণ ও টাকা পয়সার লেনদেন স্বাভাবিক হলে টাকা ধার দিতে পারেন।
-হাতে হাতে টাকা না দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করুন। এতে ভবিষ্যতে কোন আর্থিক সংকট দেখা গেলে ডকুমেন্টস হিসেবে আদালতে বা পুলিশের কাছে তথ্য প্রদান করতে পারবেন।
-১০-২০ হাজার টাকার বেশি টাকা হলে প্রয়োজনে একটি কাগজে স্টেটমেন্ট লিখে নিতে পারেন। টাকা ধার দেয়া বড় বিষয়, স্টেটমেন্ট কেন করবেন না?
-টাকা ধার দেয়ার সময় বোঝার চেষ্টা করুন যিনি ধার করছেন তার ফেরত দেয়ার প্ল্যান কি? কয় মাসে অর্থ প্রদান করবেন, কিভাবে করবেন এসব স্পষ্টভাবে কয়েকবার জিজ্ঞেস করবেন। কোন দ্বিধা তৈরি হলে সতর্ক থাকুন।
যখন অনাত্মীয় কাউকে টাকা ধার দেবেন:
-যিনি টাকা ধার দিচ্ছেন তাকে সামাজিকভাবে চেনে এমন ৩-৪জন মানুষের কাছ থেকে তার সম্পর্কে, তার আচরণ সম্পর্কে জানুন। তিনি কেমন অর্থ খরচ করেন, কতটা পেশাদার এসব জেনে সিদ্ধান্ত নিন। টাকা ধার চাইলেই যে ধার দিতে হবে এমন তো আর নয়?
-টাকা ধার দেয়ার সময় অবশ্যই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করবেন। যত পরিমাণই হোক না কেন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবশ্যই ব্যবহার করবেন।
-যিনি টাকা ধার নিচ্ছেন তার টাকা ফেরত দেয়ার পরিকল্পনা কি জানুন। অনেক সময় পরিকল্পনা ছাড়াই আমরা টাকা ধার নেই, কিভাবে ফেরত দিবো তা জানি না। এটা জানা প্রয়োজন। যখন তখন ধার চাইলাম আর ধার দিলাম এমন অভ্যাস করবেন না।
-টাকার পরিমাণ বেশি হলে অবশ্যই কাগজে স্টেটমেন্ট লিখে রাখবেন। ১ লাখ টাকার জন্য ১০০ টাকার লিগাল পেপার কোন বিষয় বলেন?
-টাকা ফেরত দেয়ার শর্তগুলো তাকে প্রয়োজন হলে লিখিতভাবে কোন কাগজে লিখে দিন। এতে পেশাদার সম্পর্ক তৈরি হয়।
যখন সহকর্মী বা কলিগকে টাকা ধার দেবেন:
-তার অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা নিন।
-কেউ চাইলো আর অর্থ দিলাম এমনটা কখনই করবেন না। সহকর্মী হিসেবে দুরত্ব অবশ্যই রাখবেন।
-টাকা ধার দেয়ার সময় কবে টাকা ফেরত পাবেন, কিভাবে পাবেন, না পেলে কি করবেন এসব সম্পর্কে জেনে নিন।
-চক্ষুলজ্জায় কখনই টাকা ধার দেবেন না।
আরও যা যা খেয়াল রাখবেন:
-টাকা আছে বলেই যে টাকা ধার দিতে হবে, এমনটা কোথাও নেই। তাই নিজের অর্থের নিয়ন্ত্রণ নিজের কাছে রাখুন।
-টাকা ধার দেয়ার পরে নির্দিষ্ট সময় পর পর যাকে অর্থ দিয়েছেন তার খোঁজখবর নিন।
কেউ টাকা ধার ফেরত দিতে না পারলে:
-তোর সঙ্গে সামনাসামনি বসে খোলামেলা আলোচনা করুন। কেন দিতে পারছেন, কি সংকট এসব শুনুন। শোনার মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান হয়।
-প্রয়োজন মাসিক একটু একটু করে টাকা ফেরত নিন। যিনি টাকা ধার নিয়েছেন তার সমস্যা যে আপনি কেয়ার করেন তা বোঝানোর মাধ্যমে এম্প্যাথি তৈরির চেষ্টা করুন।
-যিনি অর্থ ঋণ নিয়েছেন, কিন্তু যোগাযোগ রাখছেন তার সাথে ইতিবাচক ব্যবহার করুন। সংকট সমাধানের জন্য আগের ডকুমেন্টসগুলো মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিতে পারেন।
-অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে অবশ্যই স্বাক্ষী বা তৃতীয় পক্ষের উপস্থিত রাখবেন।