
ফরাসি সমরনায়ক নেপোলিয়ন বোনাপার্ট দারুণ একজন পাঠক ছিলেন। তার নিজের একজন লাইবে্রিয়ান ছিল। যখনই কোথাও যেতেন নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বই সঙ্গে নিতেন। এমনকি কোথাও সামরিক অভিযান শেষে সেখানে লাইব্রেরি তৈরি করেছেন নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। ক্লাসিক বইয়ের প্রতি নেপোলিয়ন বোনাপার্টের আগ্রহ ছিল বেশি। প্লুটার্ক, হোমার ও ওসিয়ানের বই তিনি বেশ পড়তেন।
বইয়ের প্রতি ভালোবাসা
নেপোলিয়ন বোনাপার্টের সহপাঠী, পরবর্তীতে সেক্রেটারি, লুই বোরিয়েন ছোটবেলা থেকেই নেপোলিয়ন বোনাপার্টকে পড়তে দেখেছেন। মিলিটারি স্কুলে পড়ার অবসরে নেপোলিয়ন বোনাপার্টকে বই নিয়ে সময় কাটাতে দেখেন তিনি। তার ভাষ্যে,
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট লাইব্রেরিতে ছুটে যেতো। দারুণ আগ্রহ নিয়ে ইতিহাসের বই পড়তেন। বিশেষ করে পলিবাস ও প্লুটার্কের বইয়ে আগ্রহ ছিল তার। তিনি আরিয়ানের লেখাও পছন্ত করতেন, কুইন্টাস কার্টিয়াসের লেখাও পড়তেন।
প্যারিসের ইকোল মিলিটারিতে তরুণ আর্টিলারি অফিসার থাকাকালীন সময়ে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ফরাসী ও ইতালিয়ান লেখকদের বই পড়তেন। ইংরেজি অনুবাদও পড়তেন। কর্সিকাতে ছুটি কাটানোর ওপর নেপোলিয়ন বোনাপার্টের ভাই জোসেফের ভাষ্যে,
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট জ্য জ্যাক রুশোর প্রতি আগ্রহী ছিলেন। কর্নেলি, রেসিন ও ভলতেয়ারের লেখাও পড়তেন। তিনি প্লুটার্ক, প্লেটো, সিসেরো, কর্নেলিয়াস, নেপোস, লিভে ও ট্যাসিটাসের লেখা সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। মনটাইগনে, মন্টেস্কো ও রেয়নেলেরও লেখা লিখ। বড় একটা ট্রাংকে এসব লেখকের বই বহন করেন তিনি। ওসিয়ানের কবিতা যেমন পছন্দ করতেন তেমনি হোমারকেও।
পরবর্তীতে রুশোর প্রতি আগ্রহ হারালেও ওসিয়ানের কবিতার প্রতি আগ্রহ আজীবন ছিল। স্কটিশ কবি জেমস ম্যাকফারসন ১৭৬০ এর সময় ওসিয়ানের কবিতা সংকল প্রকাশ করেন প্রাচীন গেইলিক সোর্স থেকে। (যদিও স্যামুয়েল জনসন সেই লেখাকে নকল দাবি করে।) নেপোলিয়ন বোনাপার্ট যখন সেন্ট হেলেনাতে বন্দী থাকার সময় সেখানে ছিলেন ব্রিটিশ অ্যাডমিরাল স্যার পুলটেনি ম্যালকম। ম্যালকমের ন্ত্রী স্কটল্যান্ডের বলে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট তাকে ওসিয়ানের লেখার কথা জিজ্ঞেস করেছিলেন। লেডি ম্যালকম তার ডায়েরিতে লিখেছিলেন,
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট অনেক প্রশংসা করেন। বিশেষভাবে ডারথুলার প্রশংসা জানান। ম্যাকফারসনের কথাও জিজ্ঞেস করেন জানতে চান যে কবিতাগুলো আসল কিনা। নেপোলিয়ন বোনাপার্টের ধারণা ছিল ম্যাকফারসন এমন কবিতা লিখতে পারেন না। তার কবিতাগুলো ইংল্যান্ডের চেয়ে ইউরোপে বেশি জনপ্রিয়। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট উৎসাহের সঙ্গে বলেন, আমিই এই কবিতাকে জনপ্রিয় করেছি। আমার মাথায় ওসিয়ানের কবিতার মেঘ জমে আছে।
নেপোলিয়নের লাইব্রেরি
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ক্ষমতায় আরোহনের পরেও বইয়ের প্রতি ভালো লাগা কমাননি। ১৭৯৮ সালে মিশরের অভিযানে যাওয়ার সময় তার সেক্রেটারি বুরিয়েনকে একটা লিস্ট ধরিয়ে দেন বই সঙ্গে নেয়ার জন্য। সেই তালিকায় ছিল Treatise on Fortifications, Cook’s Voyages, Thucydides, Frederick II, Ossian, Tasso, Ariosto), Voltaire, Héloïse, Goethe’s Sorrows of Young Werther, ৪০ ভলিউমের English novels, আর বাইবেল কোরান ও বেদের মত নানান বই।
১৮০০ সালে নেপোলিয়ন লুইস রিপাল্টকে ব্যক্তিগত লাইব্রেরিয়ান হিসেবে নিয়োগ দেন। ১৮০৪ সালে তার পরিবর্তে আসেন ইতালীয় ইতিহাসবিদ কার্লো ডেনিনা। কার্লোর লেখা দ্য হিস্টোরি অব দ্য রেভুলুশন্স অব ইতালি বইটি শিক্ষার্থী অবস্থায় নেপোলিয়ন পড়েছিলেন। ১৮০৭ সালে তার জায়গায় আসেন অ্যান্টোনি-আলেকজান্ডার বারবিয়ার। ১৮০৯ সালে অস্ট্রেয়া আক্রমণের সময় বারবিয়ার একটি ভ্রম্যমান লাইব্রেরি তৈরি করেন নেপোলিয়ন বোনাপার্টের জন্য।
নির্বাসনকালে ইতিহাস, ধর্মীয়গ্রন্থ, কাব্য-সব কিছুই তিনি পড়তেন। বিশাল লাইব্রেরিতে কাউকে প্রবেশ করতে দিতেন না তিনি। ১৮২১ সালে নেপোলিয়নের মৃত্যুর পরে তার লাইব্রেরিতে ১৮১৪টি ভলিউম পাওয়া যায়। যার মধ্যে ১২২৬ টি ভলিউম ইংল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া যায়। নিজের উইলে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট লিখে যান, যে চারশ ভলিউম বই আমি নিজে পড়তাম তা যেন আমার সন্তান দ্বিতীয় নেপোলিয়নকে দেয়া হয়।
