জানুয়ারি মাসেই মুনির হাসানের নতুন বই পড়ো পড়ো পড়ো ফেসবুক ফিডে চলে আসে। পড়ার আগ্রহ তো এমনিই থাকে, মুনির হাসান স্যারের বই বা লেখা হলে তো কথাই নেই।
মুনির হাসানকে আমরা অনেকেই প্রকাশ্যে স্যার বলি, কিন্তু সামনে কথা বলার সময় “ভাই”, “বস”-ই ভরসা। স্যারের বই না পড়াটা অন্যায়, আর না কেনা তো মহাপাপ। কিন্তু আমি তো বই কেনার লোক না! শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের সাজ্জাদ ভাই আমাকে পড়ো পড়ো পড়ো কিনে দেন।
আমি মনে হয় সেই টাইপের পাঠক যাকে যে বই কিনে দেন তার অটোগ্রাফ নেই। আমার পড়ো পড়ো পড়ো বইয়ে লেখকের অটোগ্রাফ নেই, যিনি উপহার দিয়েছেন সেই সাজ্জাদ ভাইয়ের আছে।
গণিত অলিম্পিয়াডের বায়েজিদ ভূঁইয়া জুয়েল ভাইকে বলে রেখেছি, আমি কোন দিন “পড়ো পড়ো পড়ো” নিয়ে রিভিউ লিখতে তা ২৮০ পৃষ্ঠা লিখবো। মূল বই ২২০ পৃষ্ঠা, আর তার রিভিউ ২৮০ পৃষ্ঠা-দারুণ মার্কেটিং হাইপ হবে!
(আরও পড়ুন: এক বছরেই ২০০ বই পড়বেন যেভাবে!)
লর্ড অব দ্য রিংসের স্রষ্টা জে আর আর টোলকিয়েন ক্রিটিক সম্পর্ক বলেছেন, “কেউ বই পড়ে তারপরে বইটাকে কোন মতে একটা রিভিউ লিখে দেয়। বইটা পড়ে বিরক্তিকর, হাস্যকর কিংবা আবোলতাবোল মনে করে। আমিও তাদের লিখা নিয়ে একই ধারণা পোষণ করি।” কোন বই পড়ে কমেন্টস করা একটা আর্ট, ক্রিটিসিজম ইট সেল্ফ অ্যা আর্ট। আমি কে কোন বই পড়ে তা নিয়ে লেখার। পারমিনিট ২৫০+ শব্দ পড়ুয়া একজন ফাঁকিবাজ পাঠক হিসেবে দাবি করে কিছু বই যে পড়ি না তা অস্বীকার করবো না।
পড়ো পড়ো পড়ো শুরুর আগে আমি ফিল নাইটের শু ডগ বই পড়া শুরু করি। ফিল নাইট নাইকির প্রতিষ্ঠাতা। তার অটোবায়োগ্রাফি শু ডগ, আবার মুনির হাসানের বায়োগ্রাফির প্রথম অংশই পড়ো পড়ো পড়ো। যে কোন বায়োগ্রাফিরই প্রথমদিকটা আমার কাছে খুবই ঝাপসা মনে হয়। ফিল নাইট তার বইতে তার ঘর-বাড়ি-বারান্দার দারুণ এক চিত্র তুলে ধরেছেন, দূরের পাঠক হিসেবে সেইসব জায়গা কল্পনা করাটা খুব কঠিন। আমি যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগনে কোন দিন যাই নাই, সেহেতু আমাকে ওরেগনের পরিবেশ সম্পর্কে যতটাই লিখে বলা হউক না কেন, আমি বুঝে উঠতে পারবো না।
মুনির হাসান যখন ১৯৮৮ সালে বুয়েটে পড়ছেন, রাজনীতির আশেপাশে ঘুরছেন-সেই সময়টাতে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ছিল উত্তাল। যারা পড়ো পড়ো পড়ো পড়বেন তারা জেনারেল এরশাদের কারণেই ক্যান্টনমেন্ট+দেশ উত্তাল দেখতে পারবেন। সে সময়টায় আরেকটা কারণে ক্যান্টনমেন্ট গরম ছিল, সেটা ছিল আমার জন্ম। আমি সিএমএইচে জন্মেছিলাম তখন! কাকতালীয়ই বটে, স্যারের জন্মদিন আর আমার জন্মদিনই একই তারিখ, ২৯ জুলাই। পরে জেনেছি ২৯ জুলাই উদ্যোক্তা তানিয়া ওয়াহাব ও সোলায়মান সুখনের মেয়েরও জন্মদিন! সব লিও!
পড়ো পড়ো পড়োর শুরুর দিকেও অনেকগুলো চরিত্রের সঙ্গে পরিচিত হতে হয়ে পাঠকদের। বুয়েট আর চট্টগ্রামের নানান মানুষ আর চরিত্রের নানান ঘটনা, কিছুটা আড্ডার স্টাইলে লেখা। যারা মুনির হাসানের কথা শুনেছেন তারা বইটা পড়ার সময় মুনির হাসানই কথা বলছেন এমনটা ভাবতে পারেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফিল নাইটের শু ডগ পড়ে যেখানে কুয়াশা দেখেছি সেই অবস্থা ছিল বুয়েটের হল আর ক্লাসরুমের নানান চিত্র পড়ার সময়। তবে এটা ঠিক যারা বুয়েটে পড়েছেন তারা নিজেকে মুনির হাসানের জায়গায় কল্পনাতে নিয়ে যেতে পারবেন। দূরের পাঠক হিসেবে মূল ঘটনার ক্রিমটাই পড়ে মুখে হাসি আসবে আপনার।
যেহেতু বইটি কোন এক বড় আত্মজীবনীর অংশ সেহেতু প্রথমটুকুই পড়ে কোন ধরণের ক্রিটিক টাইপের মন্তব্য করতে আমি রাজি না। ৪০ বছর পরের কেউ যদি টাইম মেশিনে এখন চলে আসলে সে বইটা সম্পর্কে দারুণ কোন রিভিউ করতে পারবেন, আমি না।
যারা মুনির হাসানের বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা নিয়মিত পড়েন তারা নিশ্চিত বইটির শেষের অংশ পড়ে এখনকার মুনির হাসানকে মেলাতে পারবেন। আমি মুনির হাসানকে ২০০৭ থেকে চিনি, এরপরের অংশটুকুর জন্য বইটির দ্বিতীয় পর্ব টুকু পড়তেই হবে।
(ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ২০১৭ সালে যে বইগুলো পড়া উচিত!)
যে সব কারণে পড়ো পড়ো পড়ো পড়া ঠিক হবে না
- আপনি যদি বিসিএস পরীক্ষাই ধ্যানজ্ঞান মনে করেন তাহলে বইটা ধরাই ঠিক হবে না।
- বইটির শেষ দিকে আরও কিছু বইয়ের নাম দেয়া আছে। এটা আসলে ওই বইগুলো বেঁচার ধান্দা! অ্যাফিলিয়েটিং মার্কেটিং, একটা কিনলে আরেকটায় যাওয়ার ব্যবসা!
- বইটার শেষ দিকে কিছু মুভি দেখার তালিকা আছে, তাহসানম্যানিয়াক হলে বইটা না ধরাই উত্তম।
আমরা যারা মুনির হাসান হতে চাই, তাদের জন্য বইটা থেকে দুষ্টামি শেখার সুযোগ যেমন আছে। তেমনি বইটি পড়ে “অ্যাট দ্য এন্ড অব দ্য ডে হোয়াট ইউ রিড ইজ ইউ” বলে মনে হবে আপনার।
হ্যাপি রিডিং!
আরও পড়তে পারেন:
ফোর্বস ম্যাগ যে বই উদ্যোক্তাদের Must পড়তে বলে
-- Stay cool. Embrace weird.