গণিত অলিম্পিয়াডে প্রতি বছরই অ্যাকাডেমিক টিমে বুয়েট, ঢাবি, কুয়েট থেকে নতুন নতুন মুখ যুক্ত হয়। এবারও ২০১৭ সালের গণিত উৎসবের অ্যাকাডেমিক দলে কিছু নতুন মুখ যুক্ত হয়েছে। এদের কয়েকজনের সঙ্গে ১৯ ও ২০ ডিসেম্বর আমি কুমিল্লা ও ফেনী গণিত উৎসবে অংশ নেই। কুমিল্লা উৎসব শেষে সবাই ফেনীর দিকে ছুটছিলাম বেলাল ভাইয়ের টয়োটা হায়েছে চড়ে। তার খন্ড গল্পের এই পোস্ট।
গাড়িতে মুনির হাসান স্যার সহ রুবেল ভাই (প্রথম আলোর অ্যাডমিনের লোক), জুনায়েদ (ঢাবির হবু শিক্ষক), মুয়াজ (জুনায়েদ যখন ২ সাইজের জুতা পড়তো, মুয়াজ তখন ৮। এখন জুনাইদ ৮, মুয়াজও ৮!) আর তাসরিফ (ট্যুর ম্যানেজার), আর আমি ডেজগনেশন ছাড়া লোক।
আমার টাইম সেন্স
দুমাস আগেও আমার একমিনিট মানে ভয়ানক কিছু ছিল। আমি যে বদলাইছি তা কেউই বিশ্বাস করে না এখন। কুমিল্লা উৎসবে যাওয়ার জন্য সেই ভোর ৫.৩৫ -এ মুনির ভাইয়ের বাসার সামনে হাজির ছিলাম আমি। অথচ গাড়ি ছাড়ার সময় ছিল ৬টা!
‘তুমহারা নাম কেয়া হ্যায়, বাসন্তী?’
মুনির হাসান স্যার নতুনদের নাম আর কে কই পড়ে তা জিজ্ঞাসা দিয়ে শুরু করে তার স্কেট রোলার। প্রথমে যে নাম বলল সামিন, সে রুয়েটে ইসিই নিয়ে পড়ার কথা জানায়। সৌম্য আইইউটিতে পড়ে, সিএসইতে। সিম্পল প্রশ্ন, সিম্পল উত্তর।
এরপরে কে জানি তার নাম জুবায়ের বলে, আর আগ্রহের কথা জানায় সিনেমা বানাবে। মুনির হাসান স্যার কারন জানতে চাইলে সে ‘কি সব তাত্বিক’ কথা বলে ফেনীর দিকে গাড়ি এগিয়ে নিয়ে যায়। মুনির হাসান স্যার এসময় কে কোন সিনেমা দেখছে তা নিয়ে জানতে চায়। সবচেয়ে ছোট সিনেমা ব্যাটেলশিপ পটেমকিন দেখছি কিনা জিজ্ঞেস করে।
মুনির হাসানের শোলে
মুনির হাসান: শোলে সিনেমা দেখছো তোমরা?
গাড়ির অর্ধেক: হ্যাঁ।
গাড়ি অর্ধেক: না।
মুনির হাসান: কি বলো! তোমরা তো জীবনে তাহলে কিছুই করো নাই। যারা দেখছো তারা শোলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডায়লোগটা কি বলো?
গাড়ির অর্ধেক: কিতনে আদমি থ্যা?
মুনির হাসান: হয় নাই।
গাড়ির অর্ধেক: এ হাত মুঝে দে দো…
মুনির হাসান: হয় নাই। তোমরা যে কি!
গাড়ির সবাই: (ভাবছে, আর কোন লাইন আছে?)
মুনির হাসান: শোলেতে ধর্মেন্দ্র আর অমিতাভকে ওই যে মেয়েটা হেমা মালিনি নিতে আসে….
জুনায়েদ: বাসন্তী।
মুনির হাসান: হ্যাঁ, বাসন্তী। ওখানে দেখা হওয়ার পরে বাসন্তী সবার নাম জিজ্ঞেস করে। এলাকার কি অবস্থা তা জিজ্ঞেস করে। সেখানে মিনিট ৫ চলে যাওয়ার পরে বাসন্তী জিজ্ঞেস করে, ‘কেমন মানুষ তোমরা? আমার নাম জিজ্ঞাসা করলা না?’
তখন অমিতাভ জিজ্ঞেস করে, ‘তুমহারা নাম কেয়া হ্যায়, বাসন্তী?’
বড় নাম, শ্রেষ্ঠ
ফেনীতে গাড়িতে সবার পরিচয় পর্ব শেষ হওয়ার পরে এক কণ্ঠ থেকে চিৎকার। ‘আপনি তো আমার নাম জিজ্ঞেস করেন নাই।’ মুনির হাসানের উত্তর, ‘কি নাম তোমার?’
প্রতি উত্তর, ‘আমার নাম দেওয়ান সালসাবিল আহমেদ শ্রেষ্ট।’
মুনির হাসান, ‘এজন্যই নাম কেউ জিজ্ঞাস করে নাই!’
‘বিজয়ীরা ধ্বংস হউক’
জাফর স্যার, মুনির হাসান স্যার প্রায় গণিত উৎসবেই পুরষ্কার বিতরণের সময় বলেন অনুষ্ঠান শেষে যারা প্রাইজ পাও নাই তারা এক কোনে দাড়িয়ে ‘বিজয়ীরা ধ্বংস হও’ বলে চিৎকার করবো। ফেনী উৎসবে সেই কাজটি করছেন মুনির হাসান স্যার ও আরেক শিক্ষার্থী। তার নাম আর ছবি তোলার আগেই সে চলে যায়। ৮ বছর ধরে গণিত উৎসবের বিভিন্ন উৎসবে গেলেও এমন ঘটনা চোখে পড়ে নাই আমার।
নাজিয়ার দশ বছর
গণিত উৎসবের পরিচিত মুখ নাজিয়া। নাজিয়ার আম্মা ‘জেসমিন আন্টি’, ‘রাজিয়া ম্যাডাম/আন্টি’, ‘হামিদ ভাই’সহ আরও কয়েকজন আমরা এবার কুমিল্লা উৎসবে যাই। নাজিয়ার ১০ বছর হচ্ছে গণিত অলিম্পিয়াডে। ২০০৬ সালে চট্টগ্রামে গণিত উৎসবের মাধ্যমে ওর গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ শুরু, এরপরের গল্প Nazia MIT লিখে গুগল করলেই জানা যায়। কুমিল্লা উৎসবের সকালে নাজিয়া জানায়, ‘২ বছর আগে একই দিনে আমরা ময়মনসিংহ গণিত উৎসবে গিয়েছিলাম। সেবার ইশফাকও ছিল সেখানে।’
-- Stay cool. Embrace weird.