(ফিচার ছবির ক্রেডিট আমার। ছবিতে ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রোফেশনাল ফেলোশিপ কংগ্রেসের বাংলাদেশ-বার্মা-ভারত টিমের কয়েকজন সদস্যকে দেখা যাচ্ছে।)
ইদানিং একটা ট্রেন্ড দেখা যায়, একদল তরুণ যখন কোন কাজ করে তখন তার ‘বিরুদ্ধে’ অনলাইনে বেশ কটু কথা লিখেন অনেকেই। নানা কারণে বিরুদ্ধাচারণ, কিংবা কোন বিষয় অসন্তুষ্টি জন্মালে আমরা নেতিবাচক মতামত দেই। এই ধরণের নেতিবাচক কথা কিংবা আচরণ আসলেই একদিক থেকে যেমন সামাজিক অস্বস্তি ও অসুস্থতা আবার অন্যদিক থেকে কারও কারও সীমানার বাইরের আচরণে বিরক্তই আমাদের অস্বস্তির জন্ম দেয়।
“আমি মুন করি বনাম আমি মুন করি না”-এমন একটা বির্তক সব সময়ই দেখা যায়। শোঅফ, ফটোসেশনই সব-ইত্যাদি নেগেটিভ শব্দ মডেল ইউনাইটেড নেশন্স বা মুনের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে। কারও কারও আচরণে অন্যরা বিরক্ত হয়ে বেশ নেতিবাচক কমেন্টস করেন। যেকোন বিষয় সম্পর্কে নেতিবাচক মতামত দেয়ার আগে বিষয়টির প্রেক্ষিত বিবেচনা করা বিবেচকদের কাজ।
আমি বিশেষজ্ঞ কেউ না, কিন্তু ২০০৮ সাল থেকে টুকটাক মান/মুন বা এই টাইপের সামাজিক প্রোগ্রামের নিউজ ফিচার করার কারণে এই পরিমন্ডলের আশেপাশেই ঘুরঘুর করি। মাত্র দুই কারণে মান বা এই ধরণের স্বেচ্ছাসেবি প্রোগ্রামে তরুণদের যোগ দিতে উৎসাহ দেই না।
১. শো অফই মুন/মান
যারা “মান বিরোধী” তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘মান আসলে শো অফের জায়গা’। যে কোন জায়গাতেই আসলে শোঅফ বিষয়টা খারাপ। আগে শোঅফের মাধ্যম ছিল কম, এখন ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম বিষয়টাকে ভীষণ বিরক্তির একটা জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা বুঝি না, কোন কিছু বেশি প্রকাশ না করাই অন্য লেভেলের বুদ্ধিমত্তা। আপনি মান কিংবা এধরণের যেই প্রোগ্রাম করুন না কেন, নিজের ছবি কিংবা মতামত দিয়ে শো অফ না দেখানোই ভালো। আমি নিজেও বিশ্বাস করি, চুপচাপ নিজের মধ্যে নিজের সাফল্য কিংবা অংশগ্রহণ লুকিয়ে রাখার মধ্যে যে আনন্দ তা ফেসবুকে ৪০০ লাইক কিংবা হ্যাশট্যাগ ফিলিং গুডের সমান নয়।
কোন বিষয়েই শোঅফ করা উচিত না, একটা দুইটা ছবি শেয়ার এনাফ-বাকিগুলো ফ্লিকার প্রোফাইলে আপলোড করে রাখুন।
২. লিডার হতে চাইলে ফলোয়ার হতে হয়
আমাদের তরুণদের, বিশেষ করে ঢাকার মধ্যে, এই ট্রেন্ড বেশি দেখি-সবার একটাই লক্ষ্য নেতৃত্ব দেবে-লিডার হতে চান সবাই। লিডারশিপের উপরে যে দুইটা বই পড়েছি, ৩-৪টা টেড ভিডিও দেখে যা শিখেছি লিডারশিপ আসলে কোন আদর্শ বা কোন ব্যক্তিত্বকে ভীষণমাত্রায় অনুসরণ-অনুকরণ-অনুরণন! বিষয়টা আসলেই তাই, আপনি কাউকে কিংবা কোন আদর্শ-কোন মতামত-কোন স্কিল-কোন থিমকে নিজের মধ্যে অনুরণন করতে না পারলে আপনি কখনই লিডার হতে পারবেন না। আপনি লিডার আর তাই মানে অংশ নেন-এই ধারণা বোকামি। আপনি কিছু শিখতে, বুঝতে অংশ নিন-সেটা কাজে দিবে।
আরেকটা বিষয়, আরেহ সবাই লিডার হয়ে লাভ কি? কাউকে কাউকে তো স্মার্ট ম্যানেজার, সিইও, কিংবা নিল আর্মস্ট্রংয়ের মত পাইলট+সৈনিক+অ্যাস্ট্রোনাট হতে হবে!
৩. সার্টিফিকেট-সিভিই সব না
নানা ধরণের সামাজিক প্রোগ্রামে অংশগ্রহণে সিভি ভারী হয়, এটা সত্য। কিন্তু কিছু যদি না শিখেন তাহলে কি করবেন? আপনি যদি টিমওয়ার্কই না শেখেন, অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা করতে না বুঝেন, কিভাবে না বলতে হয়-তাই যদি না শিখেন তাহলে এসব সার্টিফিকেট শুধু কাগজ আর লেখামাত্র। নিজেকে সার্টিফিকেটের উর্ধ্বে নিয়ে কিছু শেখার আগ্রহই নিজেকে বদলে দিতে পারে। সার্টিফিকেটে আছে আপনি অমুক প্যানেলের লিডার, অথচ পরবর্তী চাকরি জীবনে লিফটম্যানের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে পারছেন না তাহলে সেই সার্টিফিকেট দিয়ে হবে?
(একটা প্রশ্ন করি, ধরুণ যুদ্ধক্ষেত্রে আপনি একটা দলের নেতা। আপনার একজন সৈনিকের পায়ে গুলি লেগে যায়, সে মাটিতে পড়ে যায়। ভারী অস্ত্র, বৃষ্টি, পুরো দলে আছে মাত্র ৩-৪জন সৈনিক। আপনি তখন কি করবেন? তাকে রেখে চলে যাবেন নাকি তাকে নিয়ে যাবেন?
আপনি এই প্রশ্নের যে উত্তর দিবেন তা আপনার নেতৃত্বের স্টাইল প্রকাশ করে অনেকাংশে। )
এবার টাইপ করছি কেন আপনি যে কোন ধরণের অনুষ্ঠানে অংশ নিবেন। সামাজিক স্কিল তো বাড়েই নিজের মতই কোন মানুষকে খুঁজে পাবেন যে কিনা আপনার দুনিয়াকে অন্যমাত্রায় নিয়ে যাবে। স্টিভ জবস কিন্তু স্টিভ ওজনিয়াকের বন্ধু ছিল না, স্টিভের আরেক বন্ধুর রেফারেন্সের বয়সে বড় স্টিভ ওজনিয়াকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। টিনএজ বয়সে এই দুজন কি করে নাই তা স্টিভ জবসের বায়োগ্রাফি পড়লে জানতে পারবেন।
১. মান যখন নেটওয়ার্কিং টুলস
নিজের নেটওয়ার্ক বাড়ানোর জন্য নেটওয়ার্ক টুলস হিসেবে মানসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ কিন্তু দারুণ কাজের। সমবয়সী শুধু নয়, সিনিয়র-জুনিয়র অন্য দুনিয়ার মানুষজনের সঙ্গে নেটওয়ার্কিং টুলস হিসেবে এধরণের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ‘স্মার্টনেস’ বলা যায়।
২. স্কিল শেখার মাধ্যম যখন মান
আমরা সাধারণত একই পরিবেশে থাকি, নতুন কিছু শেখার সুযোগ হয় কম। এধরণের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণে নিজের কি ধরণের স্কিল নাই তা সম্পর্কে যেমন জানা যায়, নতুন কিছু শেখা যায়।
৩. টিমওয়ার্কই মান
অধিকাংশক্ষেত্রে আমরা অন্য কোন নতুন মানুষ কিংবা নতুন কোন টিমে কাজে করতে অস্বস্তিতে পড়ি, সেক্ষেত্রে মান বা এধরণের সামাজিক প্রোগ্রামগুলোতে নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে কাজের সুযোগ কিন্তু ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের জন্য বেশ ইতিবাচক।
৪. অন্য নলেজ ফিল্ডে হাঁটাহাটির সুযোগ
আপনি পড়েন বিবিএতে, বন্ধুবান্ধবও সেই দুনিয়ারই হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অন্য দুনিয়ার মানুষরা কি ভাবছে-কি চিন্তা করছে তা জানতে এই ধরণের সামাজিক নেটওয়ার্কিং প্রোগ্রামে অংশ নেয়া দারুণ কাজ।
আরও পড়ুন: ইন্টার্ন হউন রকস্টারের মতন!
আমার বুদ্ধি হচ্ছে, আপনি যত ইচ্ছে সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিন-নিজের মত করে নিজের পাওয়ার লেভেলকে বাড়ানোর চেষ্টা করে যান। অন্যকে অস্বস্তিকে না ফেলাই উত্তম কি না?