“কাপুরুষের দল, গুলি করো। তোমরা শুধুমাত্র একজন মানুষকে হত্যা করতে যাচ্ছো।”
-আর্নেস্তো চে গুয়েভারার শেষ কথা (অ্যান্ডারসন, ১৯৯১)
জন লি অ্যান্ডারসন চে গুয়েভারার জীবনী দারুণভাবে লিখেছেন। তিনি একজন আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদক, যুদ্ধের সংবাদদাতা এবং দ্য নিউ ইয়র্কারের স্টাফ লেখক। একজন অনুসন্ধানী লেখক হিসাবে তার দৃঢ়তা এবং প্রশিক্ষণের কারণেই বইটি দারুণ। একচেটিয়াভাবে প্রাথমিক সূত্রের উপর ভিত্তি করে বইটি লেখা হয়। চে গুয়েভারার বিধবা স্ত্রী অ্যালেইডা মার্চের সঙ্গে কথা বলেন। অ্যান্ডারসন চে ও পরিবেশকে ব্যাখ্যা করেন সরল ভাবে। কীভাবে চে গুয়েভারা নামের মানুষটি গড়ে ওঠে তার দৃশ্য আমরা দেখতে পাই। অ্যান্ডারসন পশ্চিম-পক্ষপাতদুষ্ট ইতিহাসকে ব্যাখ্যা করেন নি।
একজন মানুষের মৃত্যুর আগের শেষ কথা হিসেবে উপরের কথাগুলো আমাকে শিহরিত করে। অনেকেই আশ্চর্য হবেন, লোকটি কে শুনে। তার অদম্য আদর্শবাদ সারা পৃথিবীতে এখন ছড়িয়ে আছে। মৃত্যুর আগেই যার কথা লোকগাঁথা হিসেবে ল্যাটিন আমেরিকা থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পরে। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে প্রাণবন্ত এক মৃত্যু ঘটে তার। তিনি আর্নেস্তো চে গুয়েভারা দে লা সেরনা।
চে গুয়েভারা আদর্শের জন্য মারা গিয়েছিলেন। আর্জেন্টিনার অভিজাত একটি ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। পরিবারের আদুরে চে জন্মগত-ভাবে হাঁপানি রোগী ছিলেন। এই রোগ চে’র চলার পথে অনেকবার বাঁধা তৈরি করেছিল।
দুর্বল হাঁপানির আক্রমণের কারণে নিয়মিত স্কুলে হাজির হতে সমস্যায় পড়েন চে। এর সময় তার সাহিত্যের প্রতি ভালবাসা তৈরি হতে দেখা যায়। জীবনের বেশিরভাগ সময়ই আমরা চে’কে পাঠক হিসেবে দেখেছি।
১৬ বছর বয়সে সাহিত্যের নানান সব বিষয়ে আগ্রহ জমে তার। এই বয়সে তিনি তার জার্নালে ফ্রয়েড ও নিৎশেকে উদ্ধৃত করেছেন। জ্যাক লন্ডন, বার্ট্রান্ড রাসেল, ফকনার, কাফকা, কামু আর সার্ত্রের বই পড়া শেষ করেন। প্রায়শই তিনি বলতেন, নেরুদা তাঁর প্রিয় ছিলেন।জওহরলাল নেহেরুর বিশ্ব ইতিহাসের কিছু চিত্র বইটি তার ভীষণ পছন্দের ছিল।
২৫ বছর বয়সে মেডিকেল স্কুলে পড়ার সময় চে তার সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। পরে একটি মোটরবাইকের মাধ্যমে দক্ষিণ আমেরিকার একটি বড় অংশ ভ্রমণ করেছেন। চে দক্ষিণ আমেরিকার নানান প্রান্তের নানান লোকদের সাথে দেখা করেছিলেন। সাধারণ মানুষের মুখে প্রথমবারের মতো বিশ্বকে দেখেছিলেন। তিনি লিখেছেন, “যে ব্যক্তি এই নোটগুলি লিখেছিল, সে আবার আর্জেন্টিনার মাটিতে পা রাখার পর মারা গেল। যে ব্যক্তি এই লেখাগুলো লিখছে ও সম্পাদনা করছে সেই আমি আর নেই। অন্তত, আমি আগে যা ছিলাম তেমন আর নই। ভবঘুরে হিসেবে আমেরিকার নানান প্রান্ত ঘুরে আমি যতটা ভেবেছিলাম তার চেয়ে বেশি বদলে গিয়েছি।’
২৭ বছর বয়সে তিনি ফিদেল ও রাউল কাস্ত্রোর সাথে দেখা করেন। তাদের আমন্ত্রণে পরে বিশাল এক বিপ্লবে নামেন তিনি। ২৬ জুলাই নামের আন্দোলনে বাতিস্তার হাত থেকে কিউবার মুক্তির আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। ৩২ বছর বয়সে ফিদেল কাস্ত্রোর বিপ্লবী সরকার চে গুয়েভারাকে জন্মসূত্রে কিউবার নাগরিক হিসাবে ঘোষণা করেছিল। চে স্বাধীন কিউবায় ভূমি সংস্কার ও সাক্ষরতা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা করেন।
৩৬ বছর বয়সে নতুন বিপ্লব শুরু করার জন্য তার মন্ত্রী পদ, কমান্ডারের পদ আর পরিবার ছেড়ে বিশ্ব সফর শুরু করে। পূর্ব পাকিস্তানের পাট শ্রমিকদের সঙ্গে দেখা করতে আদমজী জুট মিলে গোপনে সফর করার ঘটনাও ঘটে।
৩৯ বছর বয়সে চে গুয়েভারা বলিভিয়ায় ধরা পড়েন। তাকে বেঁধে রাখা হয়, তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার হাত কেটে ফেলা হয় আর একটি অচিহ্নিত গণকবরে সমাহিত করা হয়।
-- Stay cool. Embrace weird.