এখন স্টার্টআপ হোক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাবের ইভেন্ট হোক নানান কাজে আমরা বিভিন্ন ধরণের পরিকল্পনা করে থাকি। আমি ব্যক্তিগত আগ্রহে নানান ইভেন্টে যুক্ত থাকার চেষ্টা করি। সেই প্রেক্ষিতেই যারা বিভিন্ন ইভেন্ট আয়োজনে সংযুক্ত তারা কিভাবে কমিউনিকেশন প্ল্যান করতে পারেন তাদের কিছুটা ধারণা দেয়ার জন্যই এই লেখা।
পূর্ব প্রস্তুতি
যেকোন ইভেন্টের আগে থেকেই কমিউনিকেশন প্ল্যান নিয়ে একটা ম্যাপ তৈরি করে নিতে হবে। কে কোন কাজ করবেন, কে কোন দায়িত্বে সেই বিষয়গুলো ঠিক করে নিতে হবে। ইভেন্টের আগে যত স্পষ্ট কমিউনিকেশন প্ল্যান করে রাখা যায়, তত ইভেন্টের সময় মাইলেজ পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তা কম আসবে। কমিউনিকেশন প্ল্যানের অংশ হিসেবে আমরা টুকরো টুকরো করে কাজ ভাগ করে নিতে পারি।
সোশাল মিডিয়া
যেকোনো ইভেন্টের জন্য সোশাল মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ। একটি ফেসবুক পেইজ, ফেসবুক ইভেন্ট শুধু তৈরি করলেই চলবে না, সেই সব প্ল্যাটফর্ম ম্যানেজ করতে হবে। একটা ৭ দিন বা ১৪ দিনের পরিকল্পনা সাজিয়ে নিতে হবে। ডিজাইন টিমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কমিউনিকেশন ম্যাটেরিয়াল কি হবে, কখন কি পোস্ট হবে তা গুছিয়ে নিতে হবে। ইভেন্টের আগে টুকরো টুকরো ভিডিও পেইজে প্রকাশ করে এংগেজমেন্ট বাড়ানোর চেষ্টা করা যায়। এই সময়ে ইভেন্ট স্পনসর ও স্টেকহোল্ডারদের সংযুক্ত করে ইভেন্টের ব্যাকবোন শক্ত করে নিতে পারেন।
গণমাধ্যম
এখন বিভিন্ন ইভেন্টে আমরা টেলিভিশন, নিউজপেপারসহ অনলাইনকে সংযুক্ত করি। ইভেন্টের জন্য হুট করেই বললেই গণমাধ্যমকে সংযুক্ত করা যায় না। দুইভাবে গণমাধ্যমকে সংযুক্ত করা যায়।
১. বিভিন্ন এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। যারা নির্ধারিত ফি গ্রহণের মাধ্যমে বিভিন্ন গণমাধ্যমসংশ্লিষ্ট লিয়াঁজোর বিষয়টিতে সহায়তা করে।
২. বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও গণমাধ্যমে ইমেইল-চিঠি, বার্তা প্রেরণের মাধ্যমে ইভেন্টের প্রচারে মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমের নিউজরুমের ইমেইল, বার্তা বিভাগে চিঠি ও আমন্ত্রণপত্র প্রেরণের মাধ্যমে কাজটি করতে পারেন। এই কাজটি অন্তত ১ সপ্তাহ আগে থেকে গুছিয়ে নিতে হবে। ইভেন্টের ২-৩দিন আগে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের অফিস ও সাংবাদিকের কাছে আপনার ইভেন্টের তথ্যাদি সংক্ষিপ্ত আকারে প্রেরণের মাধ্যমে তাকে কভারেজের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে পারেন।
ইমেইল ও প্রাতিষ্ঠানিক সংযুক্তি
আপনার ইভেন্ট যে জীবনের শেষ ইভেন্ট বিষয়টি এমন নয়। ইভেন্টের আমন্ত্রণ জানিয়ে সংযুক্ত স্টেকহোল্ডারদের আমন্ত্রণ জানাতে পারেন, আমন্ত্রণ না হলেও অবহিত করতে পারেন। এছাড়াও বিভিন্ন করপোরেটের সংশ্লিষ্ট যোগাযোগ, ব্র্যান্ডিং বিভাগের প্রধানকেও ইভেন্টের গুরুত্ব বুঝে ইমেইল করতে পারেন। বলা যায় না, আগামী ইভেন্টে হয়তো তারাই আপনাকে স্পন্সর করবে।
ইভেন্টের দিন যা করবেন
ইভেন্টের দিন ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশাল মিডিয়াতে আপনাদের উপস্থিতি দারুণভাবে নিশ্চিত করতে হবে। ইভেন্ট লাইভের সুযোগ থাকলে তা লাইভ করুন, ইভেন্টে আগত অতিথিদের মতামত প্রকাশ করুন। এইসব ভিডিও ডকুমেন্টস কিন্তু পরবর্তী বছরের জন্য প্রুফ হিসেবে থেকে যাবে। তাই বিষয়টিতে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করুন।
ইভেন্টে স্পন্সর প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা কোন তারকার আগমন ঘটলে তার টুকরো ইন্টারভিউ প্রচার করতে পারেন। এতে ভবিষ্যতের জন্য আপনার লিগাসি তৈরি হবে।
ইভেন্টের জন্য অবশ্যই গুরুত্ব দিতে ছবি তুলতে হবে। টেলিভিশনের জন্য আপনার দলের সদস্যদের মাধ্যমে ১৫-২০ মিনিটের নানান ধরণের ফুটেজ রেকর্ড করে গুগল ড্রাইভে দ্রুত আপলোড করে রাখতে পারেন। কোন সাংবাদিক চাইলেই যেন লিংক শেয়ার করতে পারেন, সেই বিষয়টি খেয়াল রাখুন।
ইভেন্টের জন্য নানান অ্যাংগেল থেকে ১০-১৫টি ছবি তুলে গুগল ড্রাইভে হাই-রেজুলেশনে সংরক্ষণ করতে হবে দ্রুত। যে পত্রিকা ছবি চাইবে দ্রুত সরবরাহ করুন। কোন কোন ক্ষেত্রে ২-৩টি পেশাদার পত্রিকার সাংবাদিকেরা আলাদা ছবি চাইতে পারেন, তাদের জন্য আলাদা আলাদা ছবি প্রদান করুন।
পুরো ইভেন্ট নিয়ে একটি প্রেস রিলিজ আগেই তৈরি করে রাখুন। ইভেন্টের সামগ্রিক বিষয়, অতিথিদের নাম সঠিকভাবে লিখতে হবে।
ইভেন্ট পরবর্তী আপডেট
ইভেন্টের দিন ও ইভেন্টের ২-৩দিন পরে কয়েকটি প্রেস রিলিজ আপনাদের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রেরণ করতে হবে। সংবাদপত্রগুলোর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফিচার পাতা প্রকাশ হয়, চেষ্টা করুন সেই সব ফিচার পাতার সম্পাদকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। এছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন পত্রিকা ও গণমাধ্যমের স্থানীয় প্রতিবেদক বা নিজস্ব প্রতিবেদক থাকে, তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে।
ইভেন্টের পরে যে সব পত্রিকা ও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তা নিজেদের ফেসবুক ও সোশাল মিডিয়াতে প্রকাশ করুন। নিয়মিত বিরতিতে এসব প্রকাশ করলে ইভেন্টের ব্যপ্তি পাঠক ও ফেসবুক দুনিয়াতে স্পস্ট হবে।
ইভেন্ট সংশ্লিষ্ট স্পন্সর, শিক্ষক ও স্টেকহোল্ডারদের ইমেইলের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভুলবেন না কিন্তু।
ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা
একেকটি ইভেন্ট অনেক ধরণের সুযোগ তৈরি করে আমাদের। ইভেন্টের যেসব কনটাক্ট তৈরি হবে তা গুগল স্প্রেডশিট কিংবা আলাদা এক্সেল ফাইলে সংযুক্ত করুন। যেসব সাংবাদিক, স্পন্সর, স্টেকহোল্ডারের নম্বর পাবেন তা আলাদা সংরক্ষণ করুন।
পুরো ইভেন্টের একটা ১০-১৫ মিনিটে ডকুমেন্টারি নিজেদের ফেসবুক বা ইউটিউবে ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন কিন্তু।
আরও যা যা করতে পারেন:
-বিভিন্ন টেলিভিশনের টক শো অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেন। দেখা যায়, ক্লাবের প্রধানেরাই এসব টিভি আয়োজনে অংশ নিতে চান। ব্যস্ততার জন্য অনেকেই পারেন না, এক্ষেত্রে আপনার দলের অন্য সদস্যদের সুযোগ করে দিতে পারেন।
-স্পন্সর করলেই যে ইভেন্টে অতিথিদের আমন্ত্রণ জানাবেন এমন ভাবনা থেকে সরে আসতে হবে। আপনার ইভেন্ট সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদের আমন্ত্রণ জানানোর চেষ্টা করুন। ভবিষ্যতের জন্য দরজা খোলার সুযোগ রাখুন।
comments
রোকেয়া এ. রহমান মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা। নানান পরিচয়ের বড়…
আমি স্টিভ জবস, এলন মাস্ক আর বিল গেটস-ওয়ারেন বাফেটদের ম্যানেজমেন্ট স্টাইল আর বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ অ্যাপ্রোচ…
আত্মবিশ্বাস, ছোট্ট একটি শব্দ। শব্দটি ছোট হলেও খুব কম মানুষের মধ্যে শব্দটির প্রভাব খেয়াল…
সুগত বসু একজন ভারতীয় ইতিহাসবিদ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, তিনি আশির দশকের মাঝামাঝি…
In the wake of the reality of the post-corona epidemic, the global community is witnessing…
In the face of unprecedented climate challenges, Bangladesh stands at a crossroads. The recent round…