আমাদের দেশের খুব স্বাভাবিক একটা ট্রেন্ড হচ্ছে কোন একটি পণ্য বাজারে আসলেই সেটার কপিক্যাট পণ্যে বাজার ছয়লাব হয়ে যায়। সেটা জিরা পানি থেকে শুরু করে রাইড শেয়ারিং অ্যাপসগুলোর দিকে তাকালে সহজেই বোঝা যায়। এই পোস্টের মাধ্যমে আমাদের দেশের LPG গ্যাস সিলিন্ডারের ব্র্যান্ডিং কমিউনিকেশন নিয়ে কিছু শব্দ প্রকাশ করতে চাই।
(যেহেতু বিজ্ঞাপন, ডকুমেন্টারি আর আইএমসি নিয়ে ঘাটাঘাটির আগ্রহ আছে আমার সেই প্রেক্ষিতেই নানান সময়ে নানান বিষয়ে কাল্পনিক ব্র্যান্ডিং নিয়েই লেখালেখি আমার। বিষয়টা সিরিয়াস না, আবার অনেকক্ষেত্রেই হাস্যকর মনে হয়-কিন্তু দুনিয়ার সব বড় বড় ব্র্যান্ডিং সাফল্যের শুরু নাকি ছোট কিন্তু সাধারণ আইডিয়া থেকে বলে এসব লেখালেখি আমার।)
আরও পড়ুন: বেলিসিমোর ব্র্যান্ডিং নিয়ে আমি যা করতাম
কেন এই পোস্ট?
টেলিভিশনের একটি অ্যাড দিয়ে এই পোস্টের কেন লিখছি তা প্রকাশ করতে চাই। একটি গ্যাস সিলিন্ডার কোম্পানির টিভি অ্যাডের মডেল ২০ বছর বয়সী বধু মেহজাবিন। মেহজাবিন অবশ্যই মডেল হিসেবে জনপ্রিয় কিংবা আলোচিত, তাকে সেই অ্যাডে গৃহিনী হিসেবে প্রকাশের কোন গাণিতিক যুক্তি কেউ বোঝাতে পারবে না। বিষয়টা এমন যে, তৌকির আহমেদ সাম্প্রতিক সময়ে একটি স্টিলমিল আর রড নির্মাণ সামগ্রীর মডেল হয়েছেন। টাইগার উডসের কেলেঙ্কারির পরে নাইকি সরে এসেছিল নিজের ব্র্যান্ড ইমেজ হারানোর ভয়ে। সেই প্রেক্ষিতে বিষয়টি ভাবা যায় না?
ব্র্যান্ডিং নিয়ে আমি যা করতাম
আমি যেহেতু ফ্রিল্যান্সার লেখক সেহেতু আমি লিখতে বসলে কিংবা পরিকল্পনা দিলে আমার গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে নাসা কিংবা স্পেস এক্সের রকেট চালানোর বুদ্ধি দিতেই পারি। তারপরেও ঢাবি আইবিএর আইএমসি/ব্র্যান্ডের স্যার মুশতাক স্যারের সঙ্গে গল্প করতে করতে কিছু বাস্তব প্ল্যান বের করেছিলাম।
হেলথ ক্লাব: শহরের মধ্যবিত্ত সমাজে ধীরে ধীরে গ্যাস সিলিন্ডার প্রবেশ করছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষগুলো স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ার চেষ্টা করে। এলাকা এলাকায় পার্ক ধরে গ্যাস সিলিন্ডারকে সুস্বাস্থ্যরে সহযোগি ইমেইজে ফেলে হেলথ ক্লাব পরিচালনা করতাম। কমিউনিটি পাওয়ার বিষয়টা বাংলাদেশে তেমন প্র্যাকটিস হয় না, কিন্তু একটা কমিউনিটি প্রতিষ্ঠা করতে পারলে গ্যাস সিলিন্ডার ব্র্যান্ডের ইতিবাচক অবস্থান তৈরি হবে।
বাগান: গ্যাস সিলিন্ডারগুলোর দেখতে ড্রাম সাইজের বলে ঢাকাশহরের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাসমান বাগান করা যায়। যেখানে সিলিন্ডারেই থাকবে গাস। ব্যবহৃত পুরোনো সিলিন্ডারের সবুজ ব্যবহার নিশ্চিত অন্যদের মনোযোগ আকর্ষণ করবে।
রোড ডিভাইডার: ঢাকার রোড ডিভাইডার হিসেবে বিএসআরএম সিমেন্টের ছোট ছোট বার ব্যবহার করে। গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার বিকল্প ভাবনা হতে পারে।
ভ্রাম্যমান ফিলার: এরই মধ্যে আমেরিকায় গাড়িতে গ্যাস দেয়ার জন্য বড় বড় ট্যাংক অনেক শহরে ভ্রাম্যমান হয়ে ঘুরছে। আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডার ফিলারের জন্য ভ্রাম্যমান ছোট ছোট ট্রাক পরিবহন সেবা চালু করা যেতে পারে।
এলিট ক্লাব: ঢাকা শহরের বাড়িওয়ালারা যারা গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করে তাদের নিয়ে এলিট ক্লাব একটি বিকল্প ভাবনা হতে পারে। ঢাকা শহরে বসবাস করা ৬৮ শতাংশ মানুষ ভাড়া বাসায় থাকে। এই শতাংশ হিসেবে বাজারটা অনেক বড় না?
কনটেন্ট মার্কেটিং: রুপচাঁদা রান্নার অনুষ্ঠানের জন্য রিয়েলিটি শো করে একটা জায়গায় আসতে দারুণ সাফল্য পেয়েছে। গ্যাস সিলিন্ডার তো রান্নাঘরেরই বিষয়। সেই হিসেবে গ্যাস সিলিন্ডার ব্র্যান্ড যে কোন রান্নার শোতে যেতেই পারে।
পানি মার্কেটিং:অন্য ব্র্যান্ডের গ্যাস সিলিন্ডার থেকে নিজের গ্যাস সিলিন্ডার গ্রাহক আনতে কোন একটা পানির ফিল্টার কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা যায়। পানির ফিল্টার আর রান্নার গ্যাসে মধ্যবিত্ত লোকজন বেশ অর্থ খরচ করে ইদানিং।
ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা: একার মডেল
ডেভিড একারের কথা ছিল, “A company’s brand is the primary source of its competitive advantage and a valuable strategic asset.” দিন শেষে আপনার গ্যাস সিলিন্ডারের কোয়ালিটিই আপনার কোম্পানির Quality, Trust & Expertise প্রতিষ্ঠা করবে। গ্যাস সিলিন্ডারের কোর ভ্যালু trustworthiness না থাকলে ব্যবহারকারী ধরে রাখা যাবে না। এরসঙ্গে গ্যাস সিলিন্ডারকে পরিবেশবান্ধব বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত করা প্রয়োজন।