পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দিয়ে আমরা কাস্টমার, বিজনেজ দুনিয়ার হোমড়া-চোমড়া, ক্লাস প্রেজেন্টেশনে কাঁপিয়ে দিতে চাই। যখন আমরা এমএস পাওয়ার পয়েন্ট দিয়ে প্রেজেন্টেশন বানাই, একেকটা স্লাইডকে মহাকাব্য বানিয়ে ফেলি। ইনফরমেশন, গ্রাফ, ভিডিও, সাউন্ড, অ্যানিমেশন-আরও কত কি দিয়ে স্লাইডকে জাহাজ বানিয়ে ফেলি। আসলে স্লাইড বানানোর সময় আমরা কেন জানি কখনও স্লাইডটা কার জন্য বানাচ্ছি, কাকে দেখাবো-তার কথা কোনও দিন ভাবার প্রয়োজন বোধ করি না। ভাবি না বলেই একেকটা স্লাইড শো অডিয়েন্সদের কাছে বস্তা-পচা মনে হয়, কেউ মনেই রাখে না স্লাইডে কি ছিল। আপনি ভেবে দেখুন তো, সর্বশেষ কোন স্লাইডের প্রেজেন্টেশন আপনার মনে আছে?
আমি এখন স্টিভ জবসের প্রেজেন্টেশন নিয়ে The Presentation Secrets of Steve Jobs: How to Be Insanely Great in Front of Any Audience বইটা পড়ছি। একটা স্লাইড, একটা মাত্র ওয়ার্ড আর স্টিভ জবসের ডেভিড বনাম গোলিয়াথ স্টাইলে গল্প বলার স্টাইলই অ্যাপলকে কত উঁচুতে নিয়ে গেছে তা বলে বোঝানো যাবে না। আপনি-আমরা হয়তো স্টিভ হতে পারবো না, কিন্তু স্টাইল কিন্তু একটু হলেও ফলো করে প্রেজেন্টেশনকে দারুণ করা যায়।
উহু, এই পোস্টটা পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনকে ভালো করার জন্য না। আমরা সবাই বিদ্যার জাহাজ, সবাই দারুণ প্রেজেন্টেশনে ওস্তাদ-আমরা নতুন করে জ্ঞান নিতে চাই না। এই পোস্টটা আসলে কিভাবে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনকে বোরিং করা যায় তা নিয়েই পোস্ট।
যত বেশি বুলেট, তত বেশি বোরিং প্রেজেন্টেশন
স্টিভ জবসের স্লাইডে বুলেট নামের কিছুই থাকতো না। বুলেট পয়েন্ট দিয়ে আসলে অডিয়েন্সকে ‘নোট নিচ্ছেন না কেন’ সেন্স দেয়া হয়। বুলেট পয়েন্ট যত বেশি ব্যবহার করা যাবে ততই বোরিং হয় প্রেজেন্টেশন।
অডিয়েন্সকে নোট নিতে চাপ দেয়া
আপনি নোট নিচ্ছেন না কেন, এই সেন্স স্লাইডে আর কথায় বার বার প্রকাশ করে প্রেজেন্টেশনকে বোরিং করে ফেলুন। স্টিভ জবসের প্রেজেন্টেশন ছিল গল্প টানার মতো, সিনেমার গল্প বলার স্টাইল। সিনেমা হল কিংবা অপেরা দেখার সময় আমরা কি নোট নেই। আমাদের প্রেজেন্টেশন তেমনই বোরিং করা উচিত, যেন অডিয়েন্স নোট নিতে বাধ্য হয়।
বেশি সময় নিয়ে প্রেজেন্টেশন দিন
সাধারণত বড় বড় স্পিকাররা ২ মিনিটেই প্রেজেন্টেশনের মূল থিম অডিয়েন্সকে বুঝিয়ে দিতে পারেন, সেজন্যই তাদের প্রেজেন্টেশন প্রানবন্ত হয়। প্রেজেন্টেশন বোরিং করার জন্য বেশি সময় নিন, টেনে টেনে কথা বলুন, মনোটোনে কথা বলুন-দেখবেন অডিয়েন্স বিরক্ত হয়ে গেছে।
রঙ-বেরঙের স্লাইড আর গ্রাফ ব্যবহার করুন
ভায়োলেট, পিংক, ব্লু-যত ডার্ক রং চোখের উপর চাপ তৈরি করে তা স্লাইড তৈরির সময় ব্যবহার করে অডিয়েন্সকে বিরক্ত করে তুলতে পারেন। বড় বড় ফন্ট, উদ্ভট অ্যানিমেশনেও পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনকে সেই মাত্রায় বোরিং করে তোলা যায়।
ভার নিয়ে প্রেজেন্টেশন দিন
খুব বোরিং স্টাইলে প্রেজেন্টেশন দিন। বডি ল্যাঙ্গুয়েজকে এমনভাবে উপস্থাপন করুন যেন আপনিই সব, দেখবেন অডিয়েন্স বোরিং হয়ে যাবে। আর এমন সব জার্গন ব্যবহার করবেন, যেন যা বলছেন সব অডিয়েন্সের মাথার অনেক উপর দিয়ে যায়। এসব করলে আপনি নিশ্চিত থাকুন, আপনি সেই ৯৮ ভাগ প্রেজেন্টারের দলে চলে আসবেন যারা অডিয়েন্সকে বোরিং করে তুলতে পারেন।
পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনকে বোরিং করতে চাইলে আরও যা খেয়াল রাখবেন:
- দ্রুত কথা বলুন।
- অডিয়েন্স কি চায়, কি নায় চায় তা কখনই কেয়ার করবেন না। তাদের হোয়াই শ্যুড আই কেয়ার প্রশ্নের উত্তর দিবেন না।
- নেভার মেক আই কনটাক্ট।
- গ্রাফ দিয়ে স্লাইড ভরে দিন।
- দ্যা মোর টেক্সট দ্যা বেটার!
- প্রতিটি অ্যালফাবেট, প্রতিটি বাক্য, প্রতিটি শব্দ, দাড়ি-কমা সব কিছুতে অ্যানিমেশন যোগ করুন।
আরও পড়ুন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ২০১৭ সালে যা পড়তে পারেন।
-- Stay cool. Embrace weird.
ভালো লাগলো। এই কাজগুলোর উল্টো করলেই প্রেজেন্টেশন প্রাণবন্ত হয়ে যাবে 🙂
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
পাওয়ার পয়েন্ট হচ্ছে একটা ড্রইং পেপার। যিনি তৈরি করবেন তাকে বুঝতে হবে তিনি কি আঁকবেন।