আমেরিকান ফটোগ্রাফার, লেখিকা এবং সামাজিক কর্মী ডরোথি নরম্যান। ইন্দিরার সবচেয়ে কাছের বন্ধু ও আস্থাভাজন বলা যায়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা তার কাছে নিয়মিত চিঠি লিখতেন। তার চিঠিতে ভারতজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার ছবি দেখা যায়। সেই অস্থিরতার মধ্যে নেহেরু পরিবারে ইন্দিরা কিভাবে বেড়ে ওঠেন তার শব্দ আমরা খুঁজে পাই। নেহেরু পরিবার কিভাবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দ্বিশতবর্ষীয় শাসন থেকে ভারতকে স্বাধীনতা অর্জনের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসে তার ছবি আমাদের সামনে ভেসে ওঠে।
ইন্দিরা বলছেন, শৈশবকাল থেকেই আমি ব্যতিক্রমী ব্যক্তিদের দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলাম। জীবনের নানান ব্যতিক্রমী অধ্যায় আমার জীবনে সংযুক্ত। যে পরিস্থিতিতে ইন্দিরা তার বাল্যকাল পার করেছেন, সেটা ঘরোয়া ও পাবলিক উভয় ক্ষেত্রেই, সহজ বলা যায় না। তিনি মনে করতেন, পৃথিবী তার মত সংবেদনশীলদের জন্য একটি নিষ্ঠুর জায়গা।
ইন্দিরা গান্ধীকে ভারতের সম্রাজ্ঞী বলে ডাকতেন অনেকেই। ভারতের দ্বিতীয় দীর্ঘতম সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ছিলেন। ইতিহাসের মাপকাঠিতে তিনি নিঃসন্দেহে ভারতীয় রাজনীতির সবচেয়ে বিতর্কিত ব্যক্তিদের একজন।
ক্যাথরিন ফ্রাঙ্কের জীবনীতে ইন্দিরা গান্ধীর জীবনসংশ্লিষ্ট ও উল্লেখযোগ্য ঘটনাবহুল নানান চিত্র দেখা যায়। রবীঠাকুরের সঙ্গে ইন্দিরা গান্ধী, শান্তিনিকেতনে তার অবস্থান, ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ নিয়ে নানান কথা আমরা বইটি থেকে পাই। ব্যক্তি ইন্দিরার বিকাশ আমরা বইয়ের পাতায় দেখতে পাই। নানান রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত ঘটনার দেখা মেলে।
ইন্দিরা গান্ধী শৈশব থেকেই ছিলেন জনসম্মুখে, পত্রিকার ফ্রন্টপেইজে। অল্প বয়সেই ফুসফুসের বিরল পালমোনারি যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হন ইন্দিরা। তার মা কমলা নেহেরু সেই সময় অসুস্থ ছিলেন। বাবা রাজনীতির জন্য জেলে বা ব্যস্ত। মায়ের চিকিৎসার জন্য বেশিরভাগ সময় এখানে সেখানে থাকতে হতো ইন্দিরাকে। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ইন্দিরাকে স্বাভাবিক ও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের সুযোগ দেয়নি।
বাবা পন্ডিত জওহরলাল নেহরুর সাথে দূরত্ব ছিল তার। বাবা জেল থেকে চিঠিপত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখতেন ইন্দিরার সঙ্গে। নেহেরু পরিবারের কন্যা হিসেবেই শৈশবে বেড়ে ওঠেন তিনি। শৈশবকালে দীর্ঘকালের জন্য সামাজিক নিষ্ক্রিয়তা বা অসুস্থতায় বিষন্ন ইন্দিরাকে আবিষ্কার করি আমরা।
ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে সংযুক্তি, ১৯৩০-১৯৪০ দশকে তরুণ ইন্দিরার দেখা পাই আমরা। ভারতের স্বাধীনতা, মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যু, নানান সামাজিক সংকটে ইন্দিরা ভবিষ্যত প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গতিপথ আমরা খুঁজে পাইনি। পুরুষ নির্ভর ভারতীয় আধিপত্যশীল রাজনৈতিক দৃশ্যে ইন্দিরার বেড়ে ওঠা খুব আলোচিত কিছু ছিল না।
পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু রাজনৈতিক হিসেবে সফল। নেহেরু পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিপূর্ণ। কিন্তু বাবা নেহেরুর দায় আর ইন্দিরার বেড়ে ওঠা নিয়ে আমাদের সামনে অনেকগুলো প্রশ্ন দাঁড় করিয়ে দেয়।
ইন্দিরার জীবনে আমরা অনেকগুলো ঘটনা দেখি যেখানে সাহস ও অধ্যবসায়ের শক্তির পরিচয় মেলে। পরিবারের সদস্যদের হারিয়ে আবারো কাজ শুরু করা। ক্ষমতা হারিয়ে আবারও প্রবল ম্যান্ডট নিয়ে ক্ষমতায় আসা-এসব নিয়ে ইন্দিরা ষাট ও সত্তরের দশকে শুধু ভারত নয়, বৈশ্বিক রাজনীতিতে আলোচিত মুখ।
ইন্দিরা বলছেন, আমি একটি খুব ছোট খাঁচায় থাকি। সেই খাচার একটি পাখির মত অনুভব করেছি। আমার ডানা দণ্ডের বিরুদ্ধে আঘাত করলে আমি সরে যাই। আমার নিজের মতো করে জীবনযাপন করার সময় এসেছে। এটা কি হবে? আমি মোটেও জানি না। এই মুহুর্তের জন্য, আমি শুধু মুক্ত হতে চাই…এবং আমার নিজের দিক খুঁজে পেতে চাই। কংগ্রেসের সভাপতি হওয়ার অভিজ্ঞতা কখনও কখনও আনন্দদায়ক, কখনও কখনও হতাশাজনক, তবে অবশ্যই সার্থক। কিন্তু…..।
-- Stay cool. Embrace weird.