অদ্ভুতভাবে জুলাই মাসেই শেষ করেছি বইটি, বইটির লেখকের জন্মও জুলাই মাসে। কার্যত বায়োগ্রাফির সব সময়েই ভক্ত আমি। সেখানে ম্যানডেলার বায়োগ্রাফি অনেকদিন ধরেই আশেপাশে ছিল। আন্তর্জাতিক সম্পর্কে অনার্সে পড়ার সময় মহাত্মা গান্ধীর বায়োগ্রাফি রিভিউ হিসেবে লেখার একটা অ্যাসাইনমেন্টের কথা মনে আছে। সেটাই সম্ভবত প্রথম পড়া বায়োগ্রাফি আমার। এরপরে স্টিভ জবস, স্টিভ ওজনিয়াকের বায়োগ্রাফি আমার আগ্রহকে আরও বাড়িয়েছে। সে প্রেক্ষিতে আমার স্যার মুনির হাসানের টেবিলে ৪টা ম্যান্ডেলার বায়োগ্রাফি পাই। তিনি নেলসন ম্যানডেলার ভীষণ ভক্ত বলে জানি, তার বাড়িতেও ২০১৪ সালে মুনির হাসান গিয়েছিলেন।
একদিকে চাকরি, একদিকে হতাশা, অন্যদিকে বই পড়া, আবার পড়ে তা নিয়ে লেখা আইপিএলে খেলার মতই বিলাসিতা আমার। তারপরেও পড়াশেষে বইটা নিয়ে লিখছি।
১৯৯৪ সালে লং ওয়াক টু ফ্রিডম প্রকাশিত হয়। ছোট্ট একটা গায়ের ছেলে কিভাবে আফ্রিকার ভবিষ্যৎ হয়ে ওঠেন তার ছায়ালেখ আছে বইটিতে। বায়োগ্রাফিখানাকে ডায়েরি বললে ভুল হবে না। আগে আমি যত বায়োগ্রাফি পড়েছি সব ছিল সামারি বা ২০০ পৃষ্টার কম, সহজপাঠ্য। লং ওয়াক টু ফ্রিডম এক কথায় লং! বেশ বড় বই, অনেক সময় হারিয়ে ফেলেছি কোথায় ছিলাম। যারা রিসার্চ করতে চান, তাদের জন্য বইটিতে অনেক এলিমেন্ট আছে। কিন্তু মিলেনিয়ালসরা বায়োগ্রাফির চেয়ে ২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমা দেখে নিবে নিশ্চিত।
বইটির প্রেক্ষিত শুরু হয় আজ থেকে প্রায় শত বছর আগে। কিভাবে আফ্রিকায় সাদা-কালো বৈষম্য কাটিয়ে এক আফ্রিকার জন্ম হয়-তাই প্রকাশ পেয়েছে বায়োগ্রাফিতে। যারা আফ্রিকার ইতিহাস নিয়ে পড়েন বা আগ্রহী তারা বইটি থেকে দারুণ সব বিষয় জানতে পারবেন। আফ্রিকান বালকদের শিকারে যাওয়ার গল্প, প্রথম স্কুলে যাওয়ার গল্প, নেলসন নামের উদ্ভব-সব। ব্যক্তিগত আদর্শে ও রাজনৈতিক ধারণায় ম্যান্ডেলা একজন সচেতন, দয়ালু এবং সহানুভূতিশীল নেতা ছিলেন। নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন একজন বর্ণবাদ বিরোধী বিপ্লবী। ১৮ জুলাই ১৯১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সেই দিনগুলিতে ম্যান্ডেলার জন্মস্থানটি ট্রান্সকেই অঞ্চল হিসাবে পরিচিত ছিল। বছরের পর বছর ধরে ম্যান্ডেলার নাম পরিবর্তিত হয়। প্রথমে তার বাবা তার নাম রাখেন রোলিহলাহলা, যাকে আজকের ভাষায় “সমস্যা সৃষ্টিকারী” হিসাবে অনুবাদ করা যেতে পারে। তার বাবা শুধু জোসা জাতিরই অংশ ছিলেন না, থেম্বু উপজাতিরও একজন প্রধান ছিলেন। তার শৈশবকালে, ম্যান্ডেলা তার পরিবারকে ভেড়ার পাল এবং বাছুর পালনে সাহায্য করছিলেন। সেই দিনগুলিতে আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপিত ছিল। কঠিন পারিপার্শ্বিকতা সত্ত্বেও তিনি তার গ্রামের একটি ছোট স্কুলে ভর্তি হয়ে নিজেকে শিক্ষিত করতে পেরেছিলেন। যখন ম্যান্ডেলার বয়স প্রায় নয় বছর, তার বাবা মারা যান। তিনি যতটা না দেশপ্রেমিক ছিলেন না, ততটা তিনি ন্যায়ের পক্ষে ছিলেন।
-- Stay cool. Embrace weird.